‘সাকার’ মেশিন দিয়ে সরানো হচ্ছে নিউমার্কেটের পানি

নিউমার্কেটের পানিনিষ্কাশনে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এই মেশিন নিয়ে এসেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন
ছবি: সংগৃহীত

বৃষ্টি হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। তবে আজ শুক্রবার সন্ধ্যার পরও ঢাকার নিউমার্কেটের ভেতরের পানি নামেনি। এমন পরিস্থিতিতে নিউমার্কেটের ভেতরের পানি অপসারণে ‘সাকার’ মেশিন নিয়ে আসা হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ওই মেশিন দিয়ে পানিনিষ্কাশনের লাইন পরিষ্কার শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম। দিনভর মার্কেটের ভেতরে পানি থাকায় আজ কোনো দোকানই খোলা হয়নি বলেও জানান তিনি।

পানিনিষ্কাশনের লাইনে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা সরাতে সাকার মেশিন কাজে লাগানো হচ্ছে। এই লাইন পরিষ্কার হলেই নিউমার্কেটে জমে থাকা পানি অপসারিত হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা
ছবি: সংগৃহীত

আজ বেলা ১১টার দিকে নিউমার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে হাঁটুপানি। ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় আছেন কখন পানি নামবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বৃষ্টি হলেই নিউমার্কেট পানিতে ডুবে যায়। এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে গতকাল বেশি বৃষ্টি হওয়ার কারণে মার্কেটের অনেক দোকানে পানি উঠেছে। দোকানের আসবাবসহ কিছু জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে। ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের ভেতরেও পানি জমে আছে। সেই পানি মোটর বসিয়ে সেচ দেওয়া হচ্ছে।

ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনের নিউমার্কেটে চারটি ফাস্ট ফুডের দোকান রয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সপ্তাহে শুক্রবার বেশি বেচাকেনা হয়। কিন্তু আজ মার্কেট খোলাই সম্ভব নয়। এটাই মূল ক্ষতি। তিনি বলেন, এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই মার্কেটের ভেতরে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা একেবারেই খারাপ। এ কারণে জলাবদ্ধতা হয়। এ ছাড়া এই বিপণিবিতান আশপাশের সড়ক থেকে নিচু। এ কারণে আশপাশের পানিও বিপণিবিতানে ঢুকে যায়। বিশেষ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) আইয়ুব আলী কলোনির পানি বিপণিবিতানের ১ নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকে।

আশরাফ জুয়েলার্সের কর্মচারী বিনয় কর্মকার বলেন, দীর্ঘক্ষণ ধরে বৃষ্টি হওয়ায় রাতেই মেঝেতে থাকা মালামাল সরিয়ে রাখা হয়। তবে কিছু আসবাব পানিতে নষ্ট হয়েছে। দোকানের কিছু বক্স ও কাগজপত্রও ভিজে গেছে। আজ দোকান খোলা সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেক ক্রেতা ফিরে যাচ্ছেন।

মিরপুর রোডের একাশং পানির নিচে। নিউমার্কেট এলাকা
ফাইল ছবি

বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে নিউমার্কেটের ২ নম্বর গেটে গিয়ে দেখা গেল, ভেতরে ঢুকতেই হাঁটুপানি। অনেক ক্রেতা মার্কেটে ঢুকতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। আর নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেটের মূল সড়কে কোমরপানি। ওই সড়ক দিয়ে যন্ত্রচালিত কোনো যানবাহন চলাচল করছে না।

নিউমার্কেটের ফুটপাতে ব্যাগের দোকান রয়েছে মো. ইমরানের। বৃষ্টিতে তাঁর অনেক মালামাল ভিজে গেছে বলে জানান। ইমরান বলেন, দুই-তিন লাখ টাকার মালামাল পানিতে ভিজে গেছে। তিনি বলেন, শুধু মালামাল ভিজে গেছে, বিষয়টি এমন নয়। সপ্তাহের শুক্রবারেই নিউমার্কেটে বিক্রিবাট্টা বেশি হয়। আজ দোকান খোলাই সম্ভব নয়।

হাঁটুসমান পানি পেরিয়ে নিজ নিজ দোকানে যাচ্ছেন মালিক ও কর্মচারীরা। নিউমার্কেট
ফাইল ছবি

ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টির পানি জমে শুধু নিউমার্কেটেই ৫০০ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে নিচতলার দোকানে পানি ঢুকে আসবাব ভিজে গেছে। কমপক্ষে ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তা ছাড়া শুক্রবার বেশি বিক্রি হয়। এই হিসাবে ক্ষতি আরও বেশি।

জলাবদ্ধতার কারণ সম্পর্কে দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, জমে থাকা বৃষ্টির পানি অন্যান্য সময় দ্রুতই নেমে যায়। পানিনিষ্কাশনের মূল লাইনে হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে। এ কারণে ধীরগতিতে পানি নামছে। ২ নম্বর গেটে সেচপাম্প দিয়ে পানিনিষ্কাশনের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

পানিতে অর্ধেকের বেশি ডুবে গেছে প্রাইভেটকারটি। নিউমার্কেট এলাকা
ফাইল ছবি

এদিকে ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটের ভেতরে পানি। সেচপাম্প দিয়ে পানি বিপণিবিতানের বাইরে ফেলা হচ্ছে। নিউমার্কেটের ভেতরে কোনো দোকান খোলা সম্ভব না হলেও ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের দোকানগুলো ধীরে ধীরে খোলা হচ্ছে। সেখানকার শাড়ি ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যতবার বৃষ্টি হয়, মার্কেটের ভেতরে পানি জমে যায়। রাস্তা থেকে নিচু হওয়ার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। পানিনিষ্কাশনের জন্য তাঁরা সেচপাম্প কিনেছেন বলেও জানান।

ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের ভাষ্য, মার্কেট আশপাশের রাস্তা থেকে নিচু হওয়ার পাশাপাশি পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভালো নয়। ড্রেনে ময়লা জমে থাকার কারণে পানিনিষ্কাশন ঠিকমতো হয় না বলেও জানান তিনি।