ঢাকায় বাংলাদেশ–ভারত পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক বুধবার

মাসুদ বিন মোমেন ও বিনয় কোত্রা
ফাইল ছবি

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধ্বে ভারতে যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আগামী বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের নানা বিষয়ের পাশাপাশি ওই সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হবে।

দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোত্রার আগামী মঙ্গলবার কাঠমান্ডু থেকে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।

দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো আজ রোববার প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে জেআরসির মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক নিয়ে ভারতের অনীহা রয়েছে। তারপরও বাংলাদেশের প্রত্যাশা, দীর্ঘ এক যুগ পর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকটি হবে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে স্বরাষ্ট্র, নৌপরিবহন, বাণিজ্য, পরিবেশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সম্মেলনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ বছর দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের অনেকগুলো বৈঠক হবে। এসব বৈঠকের বিষয়ে দুই পররাষ্ট্রসচিবের বৈঠকে আলোচনা হতে পারে।

ঢাকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোত্রার সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন আজ প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে বিনয় কোত্রার এটি প্রথম ঢাকা সফর। ১৫ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘গত এক বছরে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের অনেকগুলো বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকের সিদ্ধান্ত বুধবার পর্যালোচনা করা হবে। সব মিলিয়ে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব।’

আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে জি-২০-এর অষ্টাদশ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। স্বাগতিক ভারত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর যোগদান নিয়ে বৈঠকে আলোচনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসবে।

ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বেশি দামে কয়লা কেনার বিষয়টি দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বেশি দামে কয়লা কেনার বিষয়টির সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়ে কোনো ইনপুট (তথ্য-উপাত্ত) পেলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার সময় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের বাণিজ্যিক উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। আসামের নুমালিগড়ের তেল শোধনাগার থেকে পাইপলাইনে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে ডিজেল সরবরাহ করা হবে। টঙ্গী-আখাউড়া রেললাইনের ডুয়েল গেজে সংস্কার, রেলের রোলিং স্টকের সরবরাহ এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে রেলের উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে অগ্রগতি কতটা হলো, তা পর্যালোচনা করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকসহ নানা স্তরের ১৫ থেকে ২০টি বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেও কূটনৈতিক সূত্র জানায়। এ সূত্রে আরও জানা গেছে, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে জেআরসির মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক নিয়ে ভারতের অনীহা রয়েছে। তারপরও বাংলাদেশের প্রত্যাশা, দীর্ঘ এক যুগ পর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকটি হবে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে স্বরাষ্ট্র, নৌপরিবহন, বাণিজ্য, পরিবেশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সম্মেলনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।