সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে ‘কালারেবল লেজিসলেশন’ (কোনো কাজ সংবিধানের মধ্যে থেকে করার সুযোগ না থাকলে আইনসভা যখন ছদ্ম আবরণে ভিন্ন প্রয়োজনের যুক্তি দেখিয়ে একটি আইন তৈরি করে) বলে পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ করেছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে ষোড়শ সংশোধনী ক্ষমতার পৃথককরণ নীতি এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার লঙ্ঘন।
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী এনেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ গত বছরের ২০ অক্টোবর রায় দেন। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় (৫০ পৃষ্ঠার) ৩ জুন সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হয়। ফলে কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি পুনর্বহাল হয়। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে সই করা পত্র দিয়ে কোনো বিচারক চাইলে পদত্যাগ করতে পারবেন—এই বিধানও ফিরিয়ে আনা হয়। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয় প্রধান বিচারপতি ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতিকে নিয়ে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের লেখা রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করে অপর পাঁচ বিচারপতি পৃথক পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। তাঁরা হলেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম (এখন অবসরে), বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক।
পূর্ণাঙ্গ রায়ের অভিমতে বলা হয়, ষোড়শ সংশোধনীর মর্মার্থ কী ছিল? সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থেকে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সংসদের হাতে ন্যস্ত করার জন্য স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী সরকারের একটি চেষ্টা ছিল, ফলে বিচারকদের স্বাধীনতা ঝুঁকির মুখে পড়ে। অন্য কথায়, যদি কোনো বিচারক তাঁর দায়িত্ব পালনের সময় সরকারের রোষানলে অথবা বিরাগের মুখোমুখি হয়ে পড়লে সংসদ সদস্যদের কলমের খোঁচায় তাঁকে (বিচারক) অপসারণ করা যেতে পারে। গণতান্ত্রিক সমাজে কি এমন পরিস্থিতি অনুমোদিত বা গ্রহণযোগ্য হতে পারে? এর উত্তর জোরালোভাবে ‘না’ বলে পূর্ণাঙ্গ রায়ে এসেছে।