‘এমন অসুখ যেন কারও না হয়, খুব কষ্ট’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ওবায়দুল্লাহ
ছবি: প্রথম আলো

হাটহাজারীর মেখল গ্রামের বাসিন্দা মো. ওবায়দুল্লাহ (৪০)। এই কয় দিন ডেঙ্গুর সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত। গায়ে শক্তি নেই। শরীর আর চলে না। সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকতে ভালো লাগে না তাঁর। তিনি বলেন, ‘এমন অসুখ যেন কারও না হয়। খুব কষ্ট। সারা শরীরে যন্ত্রণা। প্রচণ্ড মাথাব্যথা। কিছু খেতে ভালো লাগে না।’

আজ রোববার সকাল সোয়া নয়টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ১৪ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে ওবায়দুল্লাহর সঙ্গে কথা হয়। জানালার পাশে একটি শয্যায় গত সোমবার থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ইলেকট্রিকসের দোকানের কর্মী ওবায়দুল্লাহ। পাশে বসে স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম স্বামীর সেবাশুশ্রূষা করে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেই ওবায়দুল্লাহর ডেঙ্গু হয়েছে বলে ধারণা করছেন স্বামী-স্ত্রী দুজনেই। ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘গত ১৩ জুলাই আমার এক আত্মীয়কে হাসপাতালে দেখতে এসেছিলাম। তিনি নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনতলায় মেডিসিনের আরেকটি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এখান থেকে যাওয়ার পর থেকেই আমার খারাপ লাগা শুরু হয়। পরদিন শুক্রবার থেকে তীব্র জ্বর আসে, সঙ্গে মাথাব্যথা। স্থানীয় চিকিৎসককে বলে ওষুধ খেয়েছি। তারপরও জ্বর কমেনি।’

ওবায়দুল্লাহ নগরের তিন পোলের মাথায় একটি ইলেকট্রিকসের দোকানে কাজ করেন। বাড়ি থেকেই তিনি দোকানে যাওয়া-আসা করেন। জ্বর আসার পর বাড়িতেই ছিলেন। স্থানীয় পল্লিচিকিৎসকের দেওয়া ওষুধে জ্বর ভালো না হওয়ায় তিনি হাটহাজারীর আলিফ হাসপাতালে যান। সেখানে ডেঙ্গু পরীক্ষা করালে সোমবার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। ওই দিনই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।

আগের চেয়ে এখন কিছুটা ভালোবোধ করছেন ওবায়দুল্লাহ। স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্ট পেয়েছে। ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর উঠেছে। সারা শরীরে ব্যথা। কিছু খেতে পারে না। শুধু শুয়ে থাকতে চায়। জ্বর আর মাথার যন্ত্রণায় অস্থির হয়েছিল। এখন আগের চেয়ে কিছুটা ভালো।’

আরও পড়ুন

ওবায়দুল্লাহ-নুরুন্নাহার দম্পতির দুই সন্তান। ছয় বছর বয়সী ছেলে ও তিন বছর বয়সী মেয়েকে বাড়িতে ভাইয়ের স্ত্রীর কাছে রেখে হাসপাতালে আছেন তাঁরা। বাড়িতে বৃদ্ধ মা-ও আছেন। তবে বাড়িতে আর কারও জ্বর হয়নি।

ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘ছোট ছেলে-মেয়ে ও আমার মা চিন্তায় অস্থির। তারা শুধু জিজ্ঞেস করে কবে বাড়িতে যাব। হাসপাতালে আর ভালো লাগছে না। ছেলে-মেয়েদের জন্য প্রাণ কাঁদে।’

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁর (ওবায়দুল্লাহ) প্লাটিলেট কমে গিয়েছিল। এখন বেড়েছে। আজকালের মধ্যে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

হাসপাতালে ওবায়দুল্লাহর সেবাশুশ্রূষা করছেন স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম
ছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজ ৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে নতুন ভর্তি হয়েছেন ২৪ জন। হাসপাতালের তিনটি মেডিসিন ওয়ার্ড, দুটি শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ ও জরুরি বিভাগের ওয়ান–স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ারে (ওসেক) ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রামে এ বছর সরকারি হিসাবে প্রায় দুই হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২২ জন।

আরও পড়ুন