যেভাবে বেঁচে গেলেন জুনায়েদ ও অন্যরা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুনায়েদ কায়সার ইমন
ছবি: জুয়েল শীল

‘গেট খোলা পেয়ে গাড়ি উঠে যায়। মুহূর্তেই মাঝামাঝিতে সজোরে ধাক্কা দেয় ট্রেনটি। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির পেছনের ডালা (ব্যাকডালা) খুলে যায়। আমরা নিচে পড়ে যাই।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন জুনায়েদ কায়সার ইমন তাঁর বেঁচে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন এভাবে। বলেন, ‘ডালা খুলে যাওয়ায় পেছনের সবাই বেঁচে যায়।’

গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া স্টেশন এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় জুনায়েদদের মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১১ জন। আহত হন আরও ৭ জন। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ জন হাটহাজারীর আরএনজে কোচিং সেন্টারের ছাত্র ও শিক্ষার্থী। নিহত ব্যক্তিদের একজন চালক। তাঁর সহকারীও আহত হন।

আহত সাতজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জন নিউরোসার্জারি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সার্জারি বিভাগে ভর্তি হওয়া জুনায়েদ সবচেয়ে কম আঘাত পান।

আজ শনিবার জুনায়েদ তাঁর শয্যায় বসে ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আটটায় রওনা দিই। আমাদের সঙ্গে চারজন শিক্ষক ছিলেন। ১০টার দিকে পৌঁছে যাই। সেখানে গোসল করি। অনেক আনন্দ হয়। এরপর বেলা একটার দিকে রওনা দিই খৈয়াছড়া ঝরনা থেকে। কিছুক্ষণের মধ্যে মাইক্রোবাসটি বড়তাকিয়া এলাকার রেলগেটে পৌঁছায়। এরপর ঘটে দুর্ঘটনা।’

জুনায়েদ আরও বলেন, ‘আমরা পাঁচজন পেছনে বসি। আমি ছাড়া এক বন্ধু মাহিম আর তিন এসএসসি পরীক্ষার্থী আয়াত, সৈকত ও তাসফির ছিল। ক্রসিংয়ে গেট খোলা ছিল। গেটম্যান দেখিনি। গাড়িটি লাইনে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন এসে ধাক্কা দেয়। বিকট শব্দে আমরা হতবিহ্বল। নিচে পড়ে যাই। আমি উঠে দাঁড়ালাম। অন্যরা লাইনের পাশে পড়ে যায়। তখন বৃষ্টি পড়ছিল। আমি বৃষ্টির পানি খাওয়াই কয়েকজনকে।’

ট্রেনটি মাইক্রোবাসটিকে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ঠেলে নিয়ে যায়। এর মধ্যে যাত্রীরাও নেমে আসেন ট্রেন থেকে। তখন জুনায়েদ হেঁটে হেঁটে মাইক্রোবাসের কাছে যান।

জুনায়েদ বলেন, ‘হাঁটতে গিয়ে দেখি পায়ে ব্যথা লাগছে। রক্ত পড়ছে কয়েক জায়গা থেকে। মাইক্রোবাসের কাছে গিয়ে দেখি সবাই রক্তাক্ত। আমি আর পারিনি দেখতে।’
উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র জুনায়েদ এখনো জানেন না তাঁর কোন কোন বন্ধু কিংবা শিক্ষক মারা গেছেন। হাসপাতালে তাঁর পাশে রয়েছেন বাবা আবুল কাশেম। বেঁচে যাওয়ার পর এক ট্রেনযাত্রীর কাছ থেকে ফোন নিয়ে আবুল কাশেমের সঙ্গে কথা বলেছিলেন জুনায়েদ।

আবুল কাশেম বলেন, এক মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে জুনায়েদ ছোট। তাঁর ওপর অনেক আশা। আল্লাহ তাঁকে এই যাত্রা বাঁচিয়ে দিয়েছেন। অনেক শুকরিয়া।