পূর্বাভাসের চেয়ে চালের উৎপাদন কমতে পারে

দুই দফা বন্যায় ধানের ক্ষতি হওয়ায় এবার উৎপাদন কমতে পারে বলে আভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএ।

ফাইল ছবি

দেশে এবার পূর্বাভাসের চেয়ে সাড়ে তিন লাখ টন চাল কম উৎপাদিত হবে। গত মে ও জুনে বন্যায় ধানের ক্ষতি হওয়ায় উৎপাদন কমতে পারে বলে হিসাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএ। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ চাহিদা অনুযায়ী চাল, গম ও ভুট্টা আমদানি করতে পারবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

গতকাল শনিবার ইউএসডিএ ‘বাংলাদেশ গ্রেইন অ্যান্ড ফিড আপডেট’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দুই–তিন মাস পরপর সংস্থাটি বাংলাদেশবিষয়ক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ইউএসডিএ বলছে, বাংলাদেশে উৎপাদন কমায় এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে চাল ও গমের দাম আগের রেকর্ড ভেঙেছে।

‘আমরা আমনে কৃষকদের বীজ ও উপকরণসহায়তা দিয়েছি। আশা করি, এবার আমনে উৎপাদন ভালো হবে। আউশের ক্ষয়ক্ষতি আমরা আমনে কাটিয়ে উঠতে পারব।’
আব্দুর রাজ্জাক, কৃষিমন্ত্রী

মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি চলতি মাসে প্রকাশ করা বৈশ্বিক খাদ্য পরিস্থিতি প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের চালের উৎপাদন কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। চলতি বছর ৭৫ লাখ টন গমের আমদানি চাহিদা থাকলেও বাস্তবে বাংলাদেশ ৭০ লাখ টন গম আমদানি করতে পারবে বলে সংস্থাটি মনে করছে। আর ভুট্টা ২৫ লাখ টনের আমদানি চাহিদা থাকলেও আনতে পারবে ২২ লাখ টন।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আমনে কৃষকদের বীজ ও উপকরণসহায়তা দিয়েছি। আশা করি, এবার আমনে উৎপাদন ভালো হবে। আউশের ক্ষয়ক্ষতি আমরা আমনে কাটিয়ে উঠতে পারব।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়েছিল। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার টন হবে। সবচেয়ে বেশি উৎপাদন কমেছে আউশে। আউশে ২৭ লাখ টন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ২০ লাখ ৫০ হাজার টন উৎপাদিত হয়েছে। বোরো ও আমনে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হতে পারে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ এম আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ইউএসডিএর পূর্বাভাসের চেয়ে বাস্তবে আরও বেশি কমবে। কারণ, এরই মধ্যে দেশের অনেক স্থানে খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে সরকারের উচিত কম পানি দিয়ে উৎপাদনের জন্য সারা দেশে দ্রুত প্রচার চালানো এবং দ্রুত আমদানি করে মজুত বাড়ানো।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গত জুনে মোটা চালের কেজি ৫২ টাকা আর সরু চালের কেজি ৭৫ টাকা ছিল। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ ও ১৩ শতাংশ বেশি। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দিলেও ডলারের দাম ও আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ওই পরিমাণ চাল আমদানি না–ও করতে পারে।

বাংলাদেশে চালের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের বন্যাকে দায়ী করা হয়েছে। ওই বন্যায় ৫৬ হাজার হেক্টর আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গত পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ পরিমাণ ৭ দশমিক ৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি।