‘যমুনা নদী টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রকল্প–১’ শীর্ষক প্রস্তাবিত প্রকল্পে নদীটি সংকোচনের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আইনজীবী। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ রোববার এ তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
‘যমুনা নদী ছোট করার চিন্তা’ শিরোনামে গত মার্চে একটি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে গত এপ্রিল মাসে এ বিষয়ে একটি রিট করা হয়। এতে যমুনা নদী ছোট করার প্রকল্প নেওয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার বিধান অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
রিটের শুনানিতে গত ২৮ মে হাইকোর্ট ‘যমুনা নদী ছোট করতে নেওয়া প্রকল্পের’ প্রস্তাবসহ যাবতীয় নথি ১০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে পাউবোর আইনজীবীকে বলেন আদালত। একই সঙ্গে ১১ জুন শুনানির জন্য দিন রাখা হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। প্রকল্পের প্রস্তাবসহ নথিপত্র দাখিল করে পাউবোর পক্ষে শুনানি করেন প্রতিষ্ঠানটির আইন উপদেষ্টা আইনজীবী অরবিন্দ কুমার রায়। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান ও তৌফিক সাজাওয়ার।
শুনানিতে পাউবোর আইনজীবী অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পে যমুনা নদী সংকোচনের কোনো পরিকল্পনা নেই। নদীর প্রবাহ যাতে ঠিক থাকে এবং দুই পাশের পাড় যাতে ভেঙে না পড়ে সে উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশের অর্থায়নে ওই প্রকল্পের এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, যদিও প্রকল্পটি চূড়ান্ত হয়নি। তবে নদীটি ছোট করার জন্য কোনো কার্যক্রম যাতে গ্রহণ না হয়। পত্রিকায় এসেছে, নদীটি ছোট করার প্রস্তাবের কথা। তাই যেসব কর্মকর্তা নদীটি ছোট করার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব তৈরি করেছেন, তাঁরা জনগণের অর্থেই এটি করেছেন। প্রকল্প চূড়ান্ত না হলেও প্রাথমিক কাজের জন্য জনগণের অর্থ ব্যয় করা হলো, এ জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
একপর্যায়ে আদালত বলেন, নদীটি সংকুচিত করার পরিকল্পনা নেই বলে কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে। প্রস্তাব এখনো অনুমোদন করা হয়নি। আলোচনার পর্যায়ে আছে। অনুমোদন হতে পারে, আবার না–ও হতে পারে। শুনানি নিয়ে আদালত আগামীকাল সোমবার আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যমুনা নদী প্রতিবছর বড় হয়ে যাচ্ছে। বর্ষার সময় নদীটি ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার হয়ে যায়। এত বড় নদীর প্রয়োজন নেই। তাই এটির প্রশস্ততা সাড়ে ৬ কিলোমিটার সংকুচিত করা হবে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহের অন্যতম উৎস যমুনাকে ছোট করার এমন আইডিয়া এসেছে খোদ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের মাথা থেকে। এ জন্য তাঁরা ১১শ কোটি টাকার একটি প্রকল্পও প্রণয়ন করেছেন। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে যখন বারবার ব্যয় সংকোচনের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে, সে সময় মন্ত্রণালয়টি এমন প্রকল্প নিয়েছে কোনো ধরনের গবেষণা ছাড়াই। বিশেষজ্ঞরা বিরল এ প্রকল্পকে অবাস্তব বলছেন।