নির্বাচনী সহিংসতায় ১৫ প্রাণহানি: এইচআরএসএস

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পাহাড়পুর গ্রামের নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতায় ভাঙচুর হওয়া একটি বাড়িছবি: প্রথম আলো

গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মাসে নির্বাচনী সহিংসতায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) নামের একটি সংগঠন এ তথ্য জানিয়েছে।

সংস্থাটি বলেছে, নির্বাচনী সহিংসতায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন শতাধিক। আর ৩৫০টি ঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানায় এইচআরএসএস। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মূলত ১২টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে নির্বাচনী সহিংসতার এসব তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

সংগঠনটির হিসাবে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় সহিংসতায় অন্তত সাতজন নিহত হন। ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন অন্তত ৫০টি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জ, বরগুনা ও কুমিল্লায় ৩ জন নিহত হন। এ ছাড়া ১৬ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হন দেড় শতাধিক। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনের প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তারাও আক্রমণের শিকার হন। ভোটের দিন পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৩০ জনের বেশি সাংবাদিক আক্রমণ, লাঞ্ছনা ও হুমকির সম্মুখীন হন।

এইচআরএসএস জানিয়েছে, সংসদ নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে দেশের অন্তত ৩৯টি জেলায় সংঘর্ষ, সংঘাত, হত্যা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নিহত হয়েছেন অন্তত ৫ জন। এ ছাড়া ৪৫০ জনের বেশি আহত, ৬০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ, ৩০০টির বেশি ঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ভোট দেননি এমন কিছু মানুষের ওপর ও তাঁদের বাড়িতে হামলা হয়েছে।

কোনো একটি নির্দিষ্ট দলকে নির্বাচনে ভোট দেওয়া বা না–দেওয়া এবং কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষ নেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন, ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

এইচআরএসএসের দাবি, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর ও বেলকুচিতে ঈগল প্রতীকে ভোট দেওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা জেলেপাড়া ও ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চড়াও হয়ে সেখানে প্রতিমা ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও গবাদিপশু নিয়ে যান।

ঝিনাইদহে নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ি। সদর উপজেলার পোড়াহাটি
ছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে তাঁতিপাড়ায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ছয়টি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। কুষ্টিয়ার কুমারখালির ৫০টি হিন্দু পরিবারকে গত ৭ দিন অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। ঠাকুরগাঁও-১ আসনে তেনাই তোলা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট প্রদান শেষে দুজনকে হামলা করা হয়। কুমিল্লা দাউদকান্দিতে ঈগল প্রতীকের সমর্থক পিপলু সাহা ও রঞ্জন সাহা নামের দুজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। ফরিদপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদকে সমর্থন করায় মাঝিপাড়ায় ১৫ জন সংখ্যালঘুকে তাঁদের বাড়িঘরে হামলা করে আহত করা হয়। গাইবান্ধা-৫ আসনে ৪টি হিন্দু বাড়িতে হামলা করে প্রায় ৫ লাখ নগদ টাকা ও গবাদিপশু কেড়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া মাদারীপুরের কালকিনিতে বেদে সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর এবং ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করেন ক্ষমতাসীন দলের কর্মী ও সমর্থকেরা।

এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এইচআরএসএস। তারা সরকার ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্বাচনী সহিংসতার সব ঘটনা আমলে নিয়ে দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।