উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজির অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজির অভিযোগ তুলে রোববার মানববন্ধন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
ছবি: আশিকুজ্জামান

ঢাকার কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত দ্বিতীয় ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্পে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজির অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

কর্মসূচি থেকে ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বুধবারের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নির্মাণকাজ থেকে বিরত রাখার দাবি জানানো হয়। না হলে শিক্ষার্থীরা বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপজেলা চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতায় দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের সীমানাপ্রাচীন নির্মাণ ও মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ বাগিয়ে নেওয়া হয়েছে। ৬৪ কোটি টাকার একটি ভবন নির্মাণ প্রকল্পে তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার জমা দিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারি তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান না পাওয়ায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপে ফেলতে চেষ্টা করছেন তিনি। করছেন চলমান কাজগুলো দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা। এমনকি নিরাপত্তাকর্মীদের তাড়িয়ে দিয়েছেন চেয়ারম্যানের অনুসারীরা।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা সম্প্রসারিত ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত শেষ করতে ১০টি দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে দ্রুততম সময়ে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন; উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো নির্মাণপ্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার না দিয়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ দেওয়া; নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা; আবাসিক হলগুলো প্রথমে নির্মাণ করা; সব টেন্ডারের সুষ্ঠু তদন্ত; জরিপের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ২০০ একর জমি নিশ্চিত করা; প্রকল্পে ছাত্রপ্রতিনিধি যুক্ত করা বা শিক্ষার্থীদের কাছে প্রকল্পের সব তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা; দ্রুত মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করা; পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান সম্প্রসারিত দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে করার ব্যবস্থা নেওয়া।

মানববন্ধনে দেওয়া বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবৃত্তি সংসদের সভাপতি জহির উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো বেদখল আছে। এসব হল উদ্ধারে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এখন নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের বাস্তবতা হচ্ছে, সীমানাপ্রাচীরের পিলারের রড ছাড়া কিছু দৃশ্যমান হয়নি। শিক্ষার্থীরা সঠিক দৃশ্যমান উন্নয়ন চান। প্রয়োজনে চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করে উন্নয়নকাজ করা হোক।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যাম্পাসের চলমান কাজগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি, যেন দ্রুত শিক্ষার্থীদের সংকট কাটে।’

মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এটি ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো ও ক্যাম্পাসের বাইরে বাহাদুর শাহ পার্ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে এসে শেষ হয়।

অভিযোগের বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রথম দিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাগত জানিয়েছি। আমরা ভোট চাইতে গেলেও বলতে পারব, এখানে বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারও সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়নি। (অভিযোগের সঙ্গে) আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকলে গোয়েন্দা সংস্থা বের করুক।’