নীলফামারীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শ্রমিক নিহতের প্রতিবাদে ঢাকায় সমাবেশ ও মিছিল

নীলফামারীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে এক শ্রমিক নিহতের প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেছবি: প্রথম আলো

নীলফামারীতে শ্রমিক নিহতের প্রতিবাদে রাজধানীতে সমাবেশ ও মিছিল করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে জুলাই সনদে গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের নিশ্চয়তা ও নির্বাচনী তফসিলের আগেই শ্রম আইন সংশোধনের দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে বক্তারা শ্রমিক নিহতের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, নীলফামারী ইপিজেডের এভারগ্রিন প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বেতন ও ছাঁটাইবিরোধী আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই পুলিশের সংস্কারের দাবি শ্রমিক সংগঠনসহ অন্যরা জানালেও তা হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নিরাপত্তার বদলে শ্রমিকেরা তাদের গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে।

এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত, বিচার ও যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ পুলিশের মারণাস্ত্র ব্যবহারে বিধি সংশোধন ও পুলিশ সংস্কারের দাবি জানান বক্তারা। তাঁরা আরও বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর নভেম্বর মাস থেকে শ্রম সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ত্রিপক্ষীয় পরিষদ (এনটিসিসি) শ্রম আইন সংশোধন ও শ্রম খাত সংস্কারের কাজ করছে। কিন্তু এখনো শ্রম আইনের সংশোধন ও সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়নি। ঐকমত্য কমিশনে শ্রম সংস্কার কমিশন ও নারী কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ৫টি কমিশনকে যুক্ত করা হয়নি। শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী, জুলাই সনদে অবশ্যই তাদের অধিকার বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা ঘোষণা থাকতে হবে।

গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের মধ্যে শ্রমজীবীদের সংখ্যাই বেশি ছিল জানিয়ে নেতারা বলেন, নতুন বাংলাদেশে শ্রমিকের জান-জীবিকা ও মর্যাদা নিশ্চিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা জরুরি। এখন সময় এসেছে বিলম্ব না করে দ্রুত শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক কমিটির প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে আইন সংশোধন করতে হবে। নির্বাচনী তফসিলের আগেই বাংলাদেশ শ্রম অধ্যাদেশ-২৫ সম্পন্ন করতে হবে।

গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখ্তার শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ১০ দফা প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে রয়েছে রানা প্লাজা, তাজরীন ফ্যাশনসসহ অবকাঠামোগত হত্যাকাণ্ড ও মজুরি আন্দোলনে প্রাণহানির বিচার ও ক্ষতিপূরণ, আদালতে বাংলা ও বৈষম্যহীন ভাষা ব্যবহার, ন্যূনতম মজুরি কমিশন গঠন, মতপ্রকাশ ও সংগঠনের অধিকার নিশ্চিতে শ্রমিকের সংজ্ঞা সম্প্রসারণ এবং ইউনিয়ন কার্যক্রম সহজীকরণ, যৌন হয়রানি রোধে আইনি সংজ্ঞা ও দণ্ডবিধি প্রণয়ন এবং প্রসূতিকালীন ছুটি ছয় মাসে উন্নীত করা।

এ ছাড়া শ্রমিককল্যাণ তহবিল ও সেন্ট্রাল ফান্ডের স্বচ্ছ ব্যবহার, শ্রমিক ইতিহাস ও ঐতিহাসিক স্থান সুরক্ষা, শ্রম আইন সংশোধন ও খাত সংস্কারে আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয় এবং অভিযোগ নিষ্পত্তিতে অনলাইন ব্যবস্থাকে জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়।

নীলফামারীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শ্রমিক নিহতের প্রতিবাদ আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখ্তার। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

সমাবেশে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহীম চৌধুরীর পরিচালনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপ্রধান তাসলিমা আখ্তার। প্রধান বক্তা ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। আরও বক্তব্য দেন শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সহসভাপ্রধান অঞ্জন দাস, শ্রমিকনেতা আকলিমা আখতার, হযরত বিল্লাল, নুরুল ইসলম, আরশাদুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, শাহীদা বেগম, হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

সমাবেশে সংহতি জানিয়েছে নারী সংহতি, ছাত্র ফেডারেশন, বহুমুখী শ্রমজীবী হকার সমিতি, আউটসোর্সিং কর্মচারী ইউনিয়ন, দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী ইউনিয়ন। সমাবেশ শেষে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ডসহ একটি মিছিল পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।