মাইলস্টোনের ভেতরে আটকা দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব, বাইরে শিক্ষার্থীরা

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরাছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে এখনো বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা। তাঁদের বাধার মুখে কলেজ ক্যাম্পাসের ‘একাডেমিক ভবন-৭’- এ আটকা পড়ে আছেন উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।

কলেজ থেকে ফিরে যাওয়ার মুখে দিয়াবাড়িতে বাধার মুখে বিকেল ৫টা ৫২ মিনিটে কলেজের ৫ নম্বর ভবনে ফিরে আসে দুই উপদেষ্টা ও প্রেস উইংয়ের গাড়িবহর। দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব এখন একাডেমিক ভবন-৭–এর দ্বিতীয় তলায় অবস্থান করছেন এবং তাঁদের গাড়িবহর কলেজের গার্লস ক্যাম্পাসের ভেতর রয়েছে।

বর্তমানে বাইরে বিক্ষোভ চললেও কলেজের ভেতরের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। কলেজের ভেতরের ‘ভবন-৫’ এবং ‘একাডেমিক ভবন-৭’ দুটির সামনে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। পাশাপাশি র‍্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন।

মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থীরা সকাল ৯টায় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিল। সকাল সোয়া ৯টার দিকে দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্পের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সভা-সমাবেশ, দলবদ্ধ কর্মসূচি কিংবা অবস্থান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা দিয়ে জানানো হয়, দিয়াবাড়ি গোলচত্বর ও আশপাশের এলাকায় কোনো ধরনের জমায়েত বা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা যাবে না। কিন্তু শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে বিক্ষোভ শুরে করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সি আর আবরার, প্রেস সচিব শফিকুল আলম কলেজ পরিদর্শনে আসেন। সেখান থেকে বের হয়ে আসার সময় শিক্ষার্থীরা তাঁদের ঘিরে ধরেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বের হয়েছিলেন উপদেষ্টারা। কিন্তু দিয়াবাড়ি মোড়ে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে আবার কলেজে ফিরে আসেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলসহ অন্যরা
ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি জানান। এসব দাবি হলো, নিহত ব্যক্তিদের সঠিক নাম-পরিচয় প্রকাশ; আহত ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা; শিক্ষার্থীদের প্রতিটি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ; বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো প্রশিক্ষণ বিমান বাতিল করে আধুনিক ও নিরাপদ বিমান চালু এবং বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও কেন্দ্র সংস্কার করে আরও মানবিক ও নিরাপদব্যবস্থা চালু, শিক্ষকদের গায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাত তোলার ঘটনার জন্য জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া।

দুই উপদেষ্টা পরে কলেজের ৫ নম্বর ভবনের নিচতলায় কনফারেন্স কক্ষে যান। তাঁদের সঙ্গে কলেজের শিক্ষকেরাও ছিলেন। সেখানে পাঁচ থেকে সাতজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধির সঙ্গে তাঁদের আলোচনা চলে। এ সময় বাইরে শত শত শিক্ষার্থীকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন
এই ভবনে অবস্থান করছেন আইন উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব
ছবি: প্রথম আলো

বেলা পৌনে একটার দিকে উপদেষ্টারা কনফারেন্স কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিচ্ছি, আমরা প্রতিটি দাবি পূরণ করব। বিশ্বাস রাখেন।’ অভিভাবক হিসেবে ভালোবাসা জানাতে এসেছেন বলে তিনি জানান। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবির প্রতিটিই যৌক্তিক। তবে উপদেষ্টার বক্তব্যের পরও বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপদেষ্টারা আবার কলেজের ভেতরে ঢুকে যান।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে উপদেষ্টাদের গাড়ি। আজ মঙ্গলবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

পরে বেলা সাড়ে তিনটার কিছু আগে কলেজ থেকে বের হন দুই উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। এ সময় কলেজের সামনে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায়নি। উপদেষ্টাদের গাড়ি দিয়াবাড়ি মোড়ে গেলে বিকেল পৌনে চারটার দিকে বাধা দেন শিক্ষার্থীরা।

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি মোড়ে অবস্থান নিয়ে আইন উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলের চিত্র
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বের হওয়ার পর দিয়াবাড়ি মোড়ে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। সেখান থেকে তাঁদের গাড়ি ঘুরিয়ে আবার কলেজ ক্যাম্পাসে নেওয়া হয়েছে। দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব কলেজের ভেতরে একটি ভবনে গিয়েছেন।

গতকাল সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছে, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট ৩১ জন নিহত ও ১৬৫ জন আহত হয়েছেন।