নির্বাচনের জন্য প্রত্যাশিত অনুকূল পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি: সিইসি

দেশের গণমাধ্যমপ্রধানদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের মতবিনিময় সভা। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবন
ছবি: প্রথম আলো

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রত্যাশিত অনুকূল পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই রাজনৈতিক পরিবেশটা অনুকূল হয়ে উঠুক। আমার যে প্রত্যাশা ছিল, আজকে ছয় মাস, আট মাস, নয় মাস, এটার সমাধান করতে পারলেন না। দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা সমাধান করতে পারেন না, আমি একা কীভাবে...একটা জিনিস ওভারনাইট (রাতারাতি) সমাধান হবে না।’

‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: গণমাধ্যমের ভূমিকা, জাতির প্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দেশের গণমাধ্যমপ্রধানদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সভায় সূচনা বক্তব্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কুসুমাস্তীর্ণ কোনো জমিনের ওপর দিয়ে চলছি না। সমালোচনা হচ্ছে, অনাস্থার কথা বলছে, সংকটের কথা বলছে। আমরা কোনো দল নই। আমরা নির্বাচন আয়োজন করছি আয়োজক হিসেবে। সে জন্য রাজনৈতিকভাবে অনুকূল পরিবেশের আবেদন প্রথম থেকেই বহাল রেখেছি। প্রত্যাশা প্রথম থেকেই ছিল, এখন অবধি সেই প্রত্যাশিত অনুকূল পরিবেশটুকু হয়ে ওঠেনি। আমরা চাই রাজনৈতিক পরিবেশটা অনুকূল হয়ে উঠুক। আমাদের আরাধ্য কর্মটা সহজ হোক। সেটা আমরা প্রত্যাশা করি।’

নির্বাচন কমিশন নিরন্তর আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সংলাপ করেছি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। যারা অনাগ্রহী, আসতে চান না, তাদের প্রতিও আমাদের বিনীত আবেদন ছিল যে আপনারা আসেন। শেষ পর্যন্ত আমি আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দিয়েও সেই দল ও তার প্রতি সহানুভূতিশীল অন্য যেসব দল আছে, তাদের প্রতি আবেদন করেছিলাম। অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় চা খেতে আসেন, আমরা কিন্তু সাড়া পাইনি।’

এর মাধ্যমে ইসি দেখাতে চেয়েছিল যে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে—এমন মন্তব্য করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘তাদের (বিএনপিসহ যেসব দল ইসির সঙ্গে সংলাপ করেনি) যে রাজনৈতিক কৌশল, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। সেখানে আমার বলার কিছু নেই। আমরা স্পষ্ট করে জানিয়েছি, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের বা জোটের রাজনৈতিক কৌশল থাকতে পারে, সেটা রাজনৈতিক ইস্যু, নির্বাচন কমিশন ওর মধ্যে অনধিকার চর্চা করবে না। কিন্তু আমরা নিরন্তর আহ্বান জানিয়ে যাব, আপনারা আসেন, সমস্যার সমাধান হোক। অথবা মাঠে আপনারা বিরাজমান সংকটগুলো নিরসন করুন।’

সিইসির এমন সূচনা বক্তব্যের পর কথা বলেন দেশের গণমাধ্যমের প্রধানেরা। নির্বাচনের জন্য প্রত্যাশিত অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়নি—সিইসির এমন বক্তব্যকে কেউ কেউ সাধুবাদ জানান; বিরোধিতাও করেন কেউ কেউ।

পরে সমাপনী বক্তব্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল এ প্রসঙ্গে আবার কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এখন অবধি আমার যে প্রত্যাশা ছিল, আজকে ছয় মাস, আট মাস, নয় মাস; এটার সমাধান করতে পারলেন না। দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা সমাধান করতে পারেন না, আমি একা কীভাবে...একটা জিনিস ওভারনাইট (রাতারাতি) সমাধান হবে না।’

ইসির পক্ষে এ সভায় আরও বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবীব খান, রাশেদা সুলতানা ও মো. আলমগীর।

গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম, দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, এনটিভির বার্তা প্রধান জহিরুল আলম, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন, চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান, নিউজ ২৪-এর নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা, চ্যানেল ২৪-এর নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক রেজোয়ানুল হক প্রমুখ।