ব্রিকসে যোগ দিতে ব্রাজিলের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা

বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট ব্রিকসে যোগ দিতে ব্রাজিলের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা সফররত ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা বাংলাদেশের সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়টিতে ইতিবাচক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর প্রচারিত যৌথ ঘোষণায় ব্রিকসের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয়েছে।

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ব্রিকসে অন্তর্ভুক্তির জন্য বাংলাদেশকে ব্রাজিল সহযোগিতা করবে বলে আশ্বস্ত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউরো ভিয়েরা বলেন, ‘ব্রিকসে নতুন সদস্যদেশের যুক্ততার পর এ বছর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের প্রথম বৈঠক হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা বাংলাদেশের সদস্য পদের বিষয়টি বিবেচনা করব। এ বিষয়ে ব্রাজিলের পক্ষ থেকে দৃঢ় ও ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ গত বছর ব্রিকসের সদস্য পদ পাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিল। তবে ব্রিকসের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন ছাড়া কিছুই করেনি বাংলাদেশ। গত বছরের আগস্টে অনুষ্ঠিত ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে জোটটিতে নতুন করে যুক্ত হয় মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জুলাইয়ে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার আমন্ত্র্রণে দেশটিতে সফরে যেতে পারেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রধানমন্ত্রীর ব্রাজিল সফরের জন্য প্রেসিডেন্ট লুলার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণপত্র রয়েছে। জুলাইতে প্রধানমন্ত্রী ব্রাজিল সফর করতে পারেন।’

এ প্রসঙ্গে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট লুলার পক্ষ থেকে আমি প্রধানমন্ত্রীর জন্য ব্যক্তিগত এক চিঠি (সফরের আমন্ত্রণপত্র) নিয়ে এসেছি। আমি কাল (সোমবার) তাঁর সঙ্গে দেখা করে এটা হস্তান্তর করব। আমি আশা করছি, উনি শিগগরিই ব্রাজিল সফর করবেন।’

এর আগে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম রাজধানীর একটি হোটেলে ব্রাজিলের সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘আলোচনায় ব্রাজিলের পক্ষ থেকে অ্যানিমেল প্রোটিনটা ফোকাসে ছিল। বিশেষ করে ব্রাজিল অত্যন্ত কম দামে মাংস রফতানি করে। সে বিষয়ে কথা হয়েছে। আমরা আগামী কোরবানিকে সামনে রেখে তাদের ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছি, যদি সস্তাই হয়, তাহলে কোরবানির সময় গরু পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায় কি না। আমরা সম্ভাব্যতা দেখব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, আমাদের এ যৌথ আলোচনা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। জুলাইয়ে তারা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আশা করি, এর মধ্যে আমরা কিছু ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে পারব।’

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ব্রাজিল মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণে জোর দিয়েছে। আমরা চাইছি, শুধু বাংলাদেশের বাজার নয়, তারা যাতে বাংলাদেশে প্রক্রিয়া করার পর গোটা এশিয়ায় রফতানি করে, সে বিষয়ে তাদের আমরা উৎসাহিত করেছি।’

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য ব্রাজিলের বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে প্রবেশ করে। ওই দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে তুলা আমদানি করে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ব্রাজিল একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং তারা তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারকে সুরক্ষা দেয়। তৈরি পোশাকশিল্প তাদের একটি সুরক্ষিত বাজার। শুধু চীন ও বাংলাদেশ থেকে তারা আমদানি করে। বাকিটা তারা স্থানীয়ভাবে করার চেষ্টা করছে।