ঢাবির সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে উপাচার্যকে চিঠি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ তুলে উপাচার্যের কাছে চিঠি দিয়েছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। গতকাল রোববার মো. তৈয়ব আলীর বিরুদ্ধে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে চিঠিটি দিয়েছেন বাহালুল হক চৌধুরী।

অভিযোগকারী কয়েকজন জানিয়েছেন, চিঠিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীসহ তাঁর কার্যালয়ের ১৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বাক্ষর করেন। ওই চিঠিতে মো. তৈয়ব আলীর বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায়, ভুয়া বিল পেশ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের কাছে উৎকোচ দাবি, দুর্ব্যবহার, ক্ষমতার দাপট দেখানোসহ নানা অভিযোগ করা হয়। চিঠিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে তাঁকে অন্যত্র বদলি করার অনুরোধ জানানো হয়।

এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে ইতিমধ্যে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে তৈয়ব আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, গোপনীয় ও স্পর্শকাতর হওয়ায় তাঁর দ্বারা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে নেওয়া মোটেও সম্ভব নয় উল্লেখ করে উপাচার্যকে দেওয়া ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘তৈয়বকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পদসহ অন্যত্র বদলির আদেশ দানের জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি।’

গত ৩ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত পটুয়াখালীর গাজী মুনিবুর রহমান নার্সিং কলেজের পরিচালক জাকির হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর লেখা এক চিঠিতে বলেন, ‘২৭ জুন মো. তৈয়ব আলী গাজী মুনিবুর রহমান নার্সিং কলেজে বিশেষ প্রত্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে আসেন। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তিনি আমার নার্সিং কলেজের অ্যাকাউন্ট অফিসারের কাছ থেকে যাতায়াত ও খাওয়ার খরচ বাবদ ৮ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে তিনি সেই টাকা গ্রহণ করেন। এর আগেও তিনি কয়েকবার আমার নার্সিং কলেজে বিশেষ প্রত্যবেক্ষক হিসেবে আসেন এবং প্রতিবারই যাতায়াত ও খাওয়া খরচ বাবদ অনৈতিকভাবে টাকা নিয়ে যান। এ বিষয়ে জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।’ এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তৈয়বকে ১১ সেপ্টেম্বর তৈয়বকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।

সম্প্রতি ৩৪ হাজার গোপনীয় খাম ও ১২ হাজার সভাপতির খাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের ৩১৪ নম্বর কক্ষে আনার খরচেও গরমিলের অভিযোগ ওঠে তৈয়বের বিরুদ্ধে। ৮ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তৈয়বকে বলেন, ভ্যানভাড়া বাবদ (শ্রমিক খরচসহ) আপনি দুই হাজার টাকার বিল উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু তথ্য নিয়ে জানা গেল যে এই কাজের জন্য ১ হাজার ৩৫০ টাকা খরচ হয়েছে। এমন অবস্থায় অতিরিক্ত ৬৫০ টাকার বিল উপস্থাপন করার বিষয়ে আপনার মতামত লিখিতভাবে এই চিঠি পাওয়ার তিন কার্যদিবসের মধ্যে পেশ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তৈয়ব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তার কোনোটিই সত্য নয়। যেসব নার্সিং কলেজ থেকে অভিযোগ এসেছে, তাদের সঙ্গে পরে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে বলেছে, আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার জন্য আমাদের ওপর চাপ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ না দিয়ে কিছু করার ছিল না, এই অভিযোগ না দিলে আমাদের নানা হয়রানির শিকার হতে হবে। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে হয়রানি করার কারণ একটাই। সেটি হলো পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের অনেক অনিয়মের কথা আমি জানি, যা প্রকাশ করলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সমস্যা হতে পারে। ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে বিভিন্ন সময় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নানা জনকে হয়রানি করেছেন। আমাকে সরাতে পারলে তিনি (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক) স্বাধীনভাবে হয়রানি করতে পারেন। মূলত সেই কারণেই আমার ওপর তাঁর আক্রোশ।’

তৈয়ব আলী আরও বলেন, ‘চোখ ওঠায় ২৫ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর আমি ছুটি নিয়েছি। আমার অনুপস্থিতির সুযোগে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাক্ষর নিয়েছেন। গতকাল রোববার সকাল আটটার মধ্যে তিনি সবাইকে অফিসে আসতে বলেন। সবাই উপাচার্যের কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। যাঁরা আসেননি বা দেরি করেছেন, তাঁদের এর কারণ দর্শাতে হয়েছে। পরে আমি যখন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললাম, তাঁরা আমাকে বললেন যে আমরা নিরুপায়, তাঁর (বাহালুল) বিরুদ্ধে কথা বললে তিনি এখন আমাদের বদলি করে দেবেন, কোনো দায়িত্ব দেবেন না। তাই তাঁর সঙ্গে ব্যালেন্স করে থাকাই আমাদের জন্য ভালো। পুরো বিষয়টি আমি ব্যক্তিগতভাবে মাননীয় উপাচার্যকে জানিয়েছি।’

তৈয়ব আলীর পাল্টা অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিক কল করা হলে ফোন কেটে দেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগটি পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে বিষয়টি দেখে নোট নিতে বলেছি। নোটটা এলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’