চট্টগ্রাম নগরে নালার খোলা অংশের মুখে থাকা রডে হোঁচট খেয়ে পড়লে সেই রড পেটে গেঁথে যায় তরুণ ইমরুল কায়েস চৌধুরীর। এরপর তিনি ভারসাম্য রাখতে না পেরে রড থেকে ছিটকে নালায় গিয়ে পড়েন। গুরুতর আহত অবস্থায় এখন তিনি চট্টগ্রাম বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি ও লেভেলের শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লালখান বাজার সড়কের পাশে ঘটনাটি ঘটলেও শুক্রবার বিষয়টি জানাজানি হয়।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ইমরুলের পরিবার জানিয়েছে, রডটি তাঁর পেটে ৮ ইঞ্চি ঢুকে গেছে। ভেঙেছে পাঁজরের দুটি হাড়। এ ছাড়া কিডনির কিছু অংশে ক্ষত হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, লালখান বাজার সড়কে ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির মুখে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট নালা সম্প্রসারণের নির্মাণকাজ চলছে সেপ্টেম্বর থেকে।

কাজ প্রায় শেষের দিকে বলে নিরাপত্তার জন্য থাকা টিন খুলে ফেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র‍্যাংকন গ্রুপ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়তে নগরের অলংকার এলাকার বাসা থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির দিকে যাচ্ছিলেন ইমরুল। ওই সময়ে খেলোয়াড়দের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে পড়ার কারণ জানতে নিজ গাড়ি থেকে নেমে সামনের দিকে এগিয়ে যান ইমরুল। এ সময় এলাকাটি বেষ্টনীবিহীন ও অন্ধকার থাকায় তিনি হোঁচট খেয়ে নালায় পড়ে যান। নালায় পড়ার আগে নালার মুখে থাকা রড তাঁর পেটের ডান দিকে ঢুকে গিয়েছিল। পরে নালা থেকে তাঁর গাড়ির চালক ও পথচারীরা তাঁকে উদ্ধার করেন। এরপর তাঁকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

ইমরুলের চাচা আরিফ বিল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে ছুটে আসেন তাঁরা। প্রাথমিক চিকিৎসার পর ইমরুলকে অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, পরে চট্টগ্রাম এভারকেয়ার হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। রাত একটা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত অস্ত্রোপচার শেষ হয়। এরপর তাঁকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, রডটি তাঁর পেটে ৮ ইঞ্চি ঢুকে গেছে। ভেঙেছে পাঁজরের দুটি হাড়। এ ছাড়া কিডনির কিছু অংশে ক্ষত হয়েছে।

এভারকেয়ারের মহাব্যবস্থাপক ফজলে ই আকবর বলেন, রড তরুণের পেটে ঢুকে গভীর ক্ষত হয়েছে। রডটি তাঁর কিডনির পাশ দিয়ে গেছে। ভবিষ্যতে তাঁর কিডনিতে সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া তাঁর পাঁজরের দুটি হাড় ভেঙে গেছে। তবে এখন তিনি ভালো আছেন।

লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না। নিরাপত্তাবেষ্টনী ও আলোর ব্যবস্থা না থাকলে তা নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান। তিনি জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পর্যাপ্ত আলো ও বেষ্টনী রাখার নির্দেশ আগেই দেওয়া হয়েছে। কাজ প্রায় শেষের দিকে, তাই টিনের বেষ্টনী খুলে ফেলা হয়েছে। প্রকল্পের কাজের এলাকায় সাধারণ মানুষ চলাচলের সুযোগ নেই। তারপরও যেহেতু দুর্ঘটনা ঘটেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিরাপত্তার বিষয়ে আরও জোর দিতে বলা হবে।

এর আগে একই প্রকল্পের কাজের কারণে ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরের আগ্রাবাদের মাজার গেট এলাকায় খোলা নালায় পড়ে যান আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ছাত্রী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়া (১৯)। পরে নিখোঁজ হওয়ার স্থান থেকে ৩০ গজ দূরে ওই নালা থেকে ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়।