এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ হওয়ায় চট্টগ্রামে লোডশেডিং বেড়েছে, গ্যাসের চুলা জ্বলছে মিটমিট করে

গ্যাস-সংকটের কারণে রান্না ব্যাহত হচ্ছে
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম নগরের মোমেনবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা জোবাইদা ইয়াসমিন। শনিবার দুপুরে রান্না করতে গিয়ে তিনি বেশ ভোগান্তিতে পড়েন। কারণ, গ্যাস জ্বলছিল মিটমিট করে, তেমন তেজ ছিল না। ফলে রান্না করতে গিয়ে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় লেগেছে তাঁর। আবার বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে কাহিল হয়ে পড়েন তিনি।

জোবাইদা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, এক মাস ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়ছে। কিন্তু গত দু-তিন দিনে হঠাৎ লোডশেডিং দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ বেড়েছে। আর এখন পড়তে হয়েছে গ্যাস নিয়ে ভোগান্তিতে।

শুধু জোবাইদা নন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা গ্যাস ও বিদ্যুৎ নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গত শুক্রবার রাত ১১টা থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়।

এ কারণে শনিবার চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। অনেক এলাকায় গ্যাস জ্বলেছে মিটমিট করে। আবার অনেক এলাকায় বেশ কিছুক্ষণ কোনো গ্যাসই ছিল না। গ্যাস–সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে আছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। কেজিডিসিএলের মোট গ্রাহক-সংযোগ ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি, বাকিগুলো শিল্প-বাণিজ্যসহ অন্য খাতে। এসব খাতে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাওয়া যায় ২৭০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট।

কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন দক্ষিণ) আমিনুর রহমান শনিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে মহেশখালী থেকে কোনো গ্যাসই আসছে না। বর্তমানে রিজার্ভ থেকে নিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।

শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি বাসাবাড়িতেও গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে, যা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রিজার্ভে সাধারণত গ্যাস থাকে ৮০ থেকে ৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।

এদিকে গ্যাসের সমস্যার পাশাপাশি বেড়েছে লোডশেডিং। চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দফায় দফায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে দৈনিক ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ মেগাওয়াট। রাউজান ও শিকলবাহা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র দুটি গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় এসব কেন্দ্র থেকে ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

বিদ্যুতের এ পরিস্থিতির কারণে জেনারেটর ও আইপিএসের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে অনেক গ্রাহককে। কিন্তু যাঁদের এসব ব্যবহার করার সামর্থ্য নেই, তাঁদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছাড়া থাকতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন

গরমের মধ্যে লোডশেডিং নিয়ে ভোগান্তির কথা জানান নগরের অক্সিজেন এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। তিনি বলেন, গরমে যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, তখন বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সাত থেকে আটবার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করেছে। এক-দেড় ঘণ্টা পরপর এলেও কিছুক্ষণ থেকে আবার চলে গেছে।

এ ছাড়া নগরের মুরাদপুর, হামজারবাগ, মোমেনবাগ আবাসিক এলাকা, হিলভিউ, রুবি গেট, বহদ্দারহাট, উত্তর আগ্রাবাদ, বড়পুল, উত্তর কাট্টলী, ফিরোজ শাহ, বাকলিয়া, পাথরঘাটা ও জামালখান এলাকার বাসিন্দারাও বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তিতে ছিলেন।

জানতে চাইলে পিডিবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ মেগাওয়াট। তাই লোডশেডিং বেশি হচ্ছে।