আসামিদের জামিনের বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে আশ্চর্যজনক মনে হয়েছে

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনফাইল ছবি

৫০ গ্রাম থেকে ১ কেজির বেশি পর্যন্ত হেরোইন উদ্ধারের অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা পৃথক ২৫টি মামলায় আসামিদের জামিন দেন হাইকোর্ট। এই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে পৃথক আবেদন করে। এসব আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ স্থগিত করেন।

এ বিষয়ে আজ দুপুরে নিজ কার্যালয়ে ব্রিফিং করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, আসামিদের জামিন পাওয়ার বিষয়টি তাঁর কাছে খুব আশ্চর্যজনক মনে হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য অনুসারে, গত সোমবার ও মঙ্গলবার হাইকোর্ট বিভাগের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ওই ২৫ মামলায় আসামিদের (অন্তত ২৫ জন) জামিন দেন। পরে বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেলকে জানানো হলে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে পৃথকভাবে আবেদন করা হয়। এর মধ্যে বুধবার ১২টি মামলায় ও গতকাল ১৩টি মামলায় আসামিদের জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আসামিদের জামিন স্থগিত করা হয়।

‘খুব আশ্চর্যজনক মনে হয়েছে’

ব্রিফিংয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, হেরোইন উদ্ধারের ঘটনায় করা ২৫–২৬টি মামলায় আসামিদের জামিন দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ ১ কেজি ৫৩ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারের মামলা ছিল। এ ছাড়া ৯০০ গ্রাম, ৭০০ গ্রাম, ৬০০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম ও ২০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলাও আছে। নিদেনপক্ষে ৫০ ও ৭০ গ্রাম, বাকি সব ১০০ গ্রামের ওপর (মামলায় উদ্ধার করা হেরোইনের পরিমাণ)।

আসামিদের জামিন প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটা দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলাম যে এভাবে কখনো এত পরিমাণ মাদক পাওয়া গেছে, তাঁদের জামিন এত সহজে হয়ে যায়! এটা জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে গেলাম। কিছু মামলা গতকাল (বুধবার) নিয়ে যাওয়া হয়, যেগুলো স্থগিত হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) কিছু মামলা নিয়ে যাওয়া হয়। আদালতের অনুমতি নিয়ে আজ কিছু মামলা শুনানি করা হয়... গতকাল ১৩টিসহ সব মিলিয়ে ২৫–২৬টির মতো সব কটিতে আমরা স্থগিতাদেশ (জামিন স্থগিত) পেলাম।’

আসামিদের জামিনের বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘এটা একটা আমার কাছে খুব অস্বাভাবিক ঘটনা মনে হয়েছে। এর আগে শুধু গত অবকাশের (সুপ্রিম কোর্টের ছুটি) সময় একটি আদালত থেকে এ রকম ১৫–১৬টি (জামিন) দেওয়া হয়েছিল। তখন সঙ্গে সঙ্গে স্টে (স্থগিত) করিয়েছিলাম। এ ধরনের ২৫টি মামলা, এত বিপুল পরিমাণ মাদকের মামলায় জামিন হতে আমি কখনো দেখিনি। আমার কাছে এটি খুব আশ্চর্যজনক মনে হয়েছে।’

আইনগত ভিত্তি ও আসামির জামিন পাওয়ার অধিকার প্রশ্নে ব্রিফিংয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, এ মামলাগুলোর শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ গ্রামের (কারও কাছে ২৫ গ্রামের বেশি হেরোইন পাওয়া গেলে) বেশি হলে। এখানে এক কেজিও রয়েছে...।

অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন ও এ কে এম আমিন উদ্দিন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম।

ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি যেটা বলতে চাই বিচারক হিসেবে তাঁর যে দায়িত্ব আছে, সেই দায়িত্বটা উনি দেখবেন, আইন দেখবেন, সমাজের দিকে তাকাতে হবে।…মাদকের মামলা নিয়ে সমাজে এত কথা বলছি। সেখানে এত পরিমাণ মাদকের মামলায় যদি ছেড়ে (আসামিকে) দেওয়া হয়, সমাজের কী অবস্থা হবে? এটা আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। মাদকের মামলাগুলো অন্য মামলার সঙ্গে একই তুল্যমূল্যে বিবেচনা করা যাবে না। মাদকের মামলাগুলো কঠোরভাবে দেখতে হবে। কারণ, এই মাদক একটি সমাজকে ধংস করে দেয়। মানুষকে শেষ করে দিচ্ছে।’

মাদকের মামলায় সরকার কঠোর আইন করেছে এবং মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, মৃত্যুদণ্ডের বিধান যেখানে আছে, সেই মামলায় জামিনের ক্ষেত্রে আদালতকে তাঁর এখতিয়ার যথাযথভবে চর্চা করতে হবে।…এখানে অধিকাংশ মামলায় তাঁদের (আসামিদের) কাছ থেকে সরাসরি (হেরোইন) উদ্ধার করা হয়েছে। প্রমাণিত হলে অধিকাংশ মামলায় আসামিদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে।