‘ব্যাচমেট ও ক্লাসমেট কোর্টের গুঞ্জন আছে’

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান
ছবি: সংগৃহীত

বিচারালয়ে পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান বলেছেন, ‘কোনো কোনো মামলায় বুদ্ধিগত দুর্নীতি হচ্ছে—যেমন এই প্রাঙ্গণে আঙ্কেল কোর্ট, ব্যাচমেট ও ক্লাসমেট কোর্টের গুঞ্জন আছে। সে ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থার ব্যত্যয় ঘটে। বিচারালয়ে আইনজীবীরা যদি যোগ্য ও সৎ হন, তবে বিচারক ও আদালতের কর্মচারী ও কর্মকর্তারা অসৎ থাকতে পারবেন না।’

আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান তাঁর বিদায় সংবর্ধনায় এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষে (প্রধান বিচারপতির এজলাস) এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং আপিল বিভাগের অপর ছয়জন বিচারপতি এজলাসে বসা ছিলেন।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান বলেন, বিচারক নিজে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ না থাকলে শুধু সংবিধানের লেখায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে না।

ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ ভুলে বার (আইনজীবী সমিতি) ও বেঞ্চকে (আদালত) নিজ নিজ ক্ষেত্রে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকার কথা বলেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্রান্তি লগ্নে যখন ব্যক্তিসত্তা পর্যদুস্ত হয়, তখন প্রতিষ্ঠানই সবার জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়।

বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ২০০৯ সালের ৩০ জুন হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। এর দুই বছর পর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ হয় তাঁর। ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। তাঁর জন্ম ১৯৫৬ সালের ১ জুলাই। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহণ করেন। তাঁর ৬৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে ৩০ জুন। পবিত্র হজ পালন করতে ১৭ জুন সৌদি আরবে যাচ্ছেন তিনি। সে হিসেবে আজ ছিল তাঁর শেষ কর্মদিবস। প্রথা অনুসারে, শেষ কর্মদিবসে তাঁকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়।

এই সংবর্ধনায় অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির বক্তব্য দেন।

বিদায় সংবর্ধনায় বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমি আমার আইনজীবী ও বিচারিক অভিজ্ঞতা থেকেই উপলব্ধি করেছি যে বিচারালয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই দেশে সঠিক গণতন্ত্র চর্চা ও প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কিন্তু সমাজে কোনো কোনো ব্যক্তি বা শ্রেণি এই সত্যকে মেনে না নিয়ে বিচার বিভাগেও বিচার কর্মে হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টায় লিপ্ত আছে। যা দেশ-জাতি ও গণতন্ত্রের জন্য বাধা হয়ে উঠে। তবে এ কথাও একই সঙ্গে সত্য যে বিচারকদেরও সত্য উপলব্ধি করে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার ব্রত নিয়ে কাজ করতে হবে।’