জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে এখন উৎসবের আমেজ। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বড়দিনের ছুটি আর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় আজ বুধবারই কার্যত প্রচারণার শেষ দিন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে প্রথম জকসু নির্বাচন।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসতে পুরো ক্যাম্পাস প্রচার-প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। পোস্টার, লিফলেটে ছেয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অনুষদ ও চত্বর। ৭ থেকে ১০ জনের ছোট ছোট দল নিয়ে প্রার্থীরা যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে দ্বিতীয় ফটক, একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বর থেকে শহীদ মিনার, কলা অনুষদ থেকে বিজ্ঞান অনুষদ, বটতলা থেকে কাঁঠালতলা, ক্যাফেটেরিয়া ও টিএসসির (ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র) সর্বত্রই প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। পছন্দের প্রার্থী ও প্যানেল নিয়ে চলছে তাঁদের চুলচেরা বিশ্লেষণ। কে জিততে পারেন, কোন প্যানেল ভালো করবে বা কাকে ভোট দেওয়া উচিত—এসব নিয়ে আলোচনা চলছে শিক্ষার্থীদের জটলায়।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক জিলন প্রথম আলোকে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথম নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে সরব পরিস্থিতিত বিরাজ করছে, আলাদা একটা আমেজ কাজ করছে।
নির্বাচনী প্রচারণার বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে অনলাইন প্রচারণা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে চলছে জমজমাট প্রচার। প্রার্থীর সমর্থকেরা নিজেদের পছন্দের ব্যক্তির বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রাম ও ত্যাগ তুলে ধরে ভোট চাইছেন। অনেকে তৈরি করছেন ভিডিও ডকুমেন্টারি।
গণিত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তানিয়া আকতার ঐশী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছে। প্রার্থীরা নিয়মিত ভোট চাওয়ার জন্য আসছে, বিষয়টা খুবই উপভোগ করছি। আমি চাই, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে গণতন্ত্রচর্চার ধারা অব্যাহত রাখে।’
নিজেদের ইশতেহার ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী এ কে এম রাকিব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভোটারদের কাছ থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছি। তাঁদের প্রত্যেকের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছি। তারা তাদের চাওয়া–পাওয়া নিয়ে জানাচ্ছে, পরামর্শ দিচ্ছে।
রাকিব আরও বলেন, আশা করি, শিক্ষার্থীরা একটা সুন্দর জকসু নির্বাচন উপহার পাবে। সুন্দর একটা জকসু পাওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ একটি জকসু নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে উচ্ছ্বসিত ফিন্যান্স বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইনআম আহসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রাণের দাবি, আমাদের নিজস্ব ক্যাম্পাস ও ছাত্র হল নির্মাণ। নির্বাচিত প্রার্থীরা একটি সুন্দর ও পরিকল্পিত ক্যাম্পাস বিনির্মাণে কাজ করে যাবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
ভোটারদের থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী আবদুল আলিম (আরিফ)। তিনি বলেন, ‘বাস্তবসম্মত ও পরিকল্পনামাফিক কাজ করার জন্য এক বছর যথেষ্ট সময়। শিক্ষার্থীরা যদি আমাদের যোগ্য মনে করেন, তাহলে তাঁরা আমাদের বেছে নেবেন।’
স্বতন্ত্র থেকে কার্যনির্বাহী সদস্য প্রার্থী গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মিনহাজুল আলম বলেন, ‘স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করাতে একটু বেশি চাপেই আছি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের যে সাড়া পাচ্ছি, তা অভাবনীয়। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে লড়ে যাচ্ছি। আশা করি, শিক্ষার্থীরা তার মূল্যায়ন করবে।’
তফসিল অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর জকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবারের জকসু নির্বাচনে ২১টি পদের বিপরীতে মোট ১৫৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যার মধ্যে নারী প্রার্থী ১৭ জন। সদস্যপদে সবচেয়ে বেশি ৫৭ জন প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া একমাত্র ছাত্রী হলের সংসদ নির্বাচনে ১৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৩৩ জন প্রার্থী।