জবানবন্দিতে এসআই তরিকুল
ছররা গুলির কথা বাদ দিয়ে আবু সাঈদের সুরতহাল প্রতিবেদন দিতে বাধ্য করা হয়
ছররা গুলির কথা বাদ দিয়ে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. তরিকুল ইসলাম।
আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আবু সাঈদ হত্যায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষী হিসেবে এসআই তরিকুল জবানবন্দি দেন। তিনি গত বছরের ১৬ জুলাই (আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার দিন) রংপুর মহানগরের কোতোয়ালি থানা এলাকা ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
জবানবন্দিতে এসআই তরিকুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় রংপুর মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। তরিকুলকে তিনি বলেন, ‘তুমি (আবু সাঈদের) লাশ দেখেছ?’ জবাবে তরিকুল বলেন, ‘না, স্যার, আমি লাশ দেখিনি।’ তারপর তাঁকে লাশ দেখে আসতে বলেন আরিফুজ্জামান।
মরদেহ দেখে এসে আরিফুজ্জামানকে আবু সাঈদের শরীরে অসংখ্য ছররা গুলির আঘাত এবং মাথার পেছনে ক্ষতচিহ্ন আছে জানান বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন এসআই তরিকুল। তিনি বলেন, আরিফুজ্জামান তাঁকে বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদনে ছররা গুলির আঘাতের কথা লেখা যাবে না। এ কথার সঙ্গে একমত পোষণ না করলে তাঁকে গালিগালাজ করেন এবং ‘জামাত-শিবির’ হিসেবে চালান করে দেওয়ার হুমকি দেন আরিফুজ্জামান।
একপর্যায়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান তরিকুলকে বলেন, ‘আমার ওপর চাপ আছে, তোকে এটা করতেই হবে’ বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন এসআই তরিকুল। তিনি বলেন, তাঁকে আওয়ামী লীগের লোক দিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দেন আরিফুজ্জামান। এতে তিনি ভয় পেয়ে যান।
সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে তাঁর কাছে সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান আসেন উল্লেখ করে এসআই তরিকুল বলেন, আরিফুজ্জামান আবার তাঁকে চাপ দিলে উপায়ান্তর না দেখে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ সাদাতের উপস্থিতিতে ছররা গুলির কথা বাদ দিয়ে আবু সাঈদের শরীরে অসংখ্য ছোট ছোট ক্ষত চিহ্ন এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন লেখে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে বাধ্য হন।