ব্রিকসে যোগদানের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক

মোস্তাফিজুর রহমান, বিশেষ ফেলো, সিপিডি
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের ব্রিকসে যোগদানের সিদ্ধান্তকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখি। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক আমরা যত বহুধাভিত্তিক করতে পারব, ততই ভালো। ব্যবসা–বাণিজ্য ও অর্থায়নে এটার একটি ভূমিকা থাকবে।

ব্রিকসের উদ্যোগে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা পাঁচটি দেশ হলো ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। পরে অল্প কয়েকটি দেশকে ব্যাংকটির সদস্য হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সেই সুযোগ গ্রহণ করে। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকেরও (এআইআইবি) সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ। এআইআইবির প্রথম ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ।

মনে রাখতে হবে, জি–২০–এর (১৯ দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফোরাম) পরবর্তী তিন মেয়াদে সভাপতির পদ পাবে ব্রিকসভুক্ত তিনটি দেশ। প্রথমে ভারত, পরে ব্রাজিল, এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা।

আরও পড়ুন

ব্রিকসের পরবর্তী সম্মেলন আগামী আগস্টে হতে পারে। সেখানে মার্কিন ডলারের বিকল্প হিসেবে অন্যকোনো মুদ্রায় লেনদেন করা যায় কি না, তার সিদ্ধান্ত হতে পারে। বাংলাদেশ বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতকে (রিজার্ভ) বৈচিত্র্যপূর্ণ করতে পারবে।

ব্রিকসের ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। তবে সেটা পশ্চিমাদের সঙ্গে খুব সাংঘর্ষিক হবে বলে আমার মনে হয় না। ব্রিকসে ভারত আছে। ভারত আবার প্রশান্ত মহাসাগরীয় জোটে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আছে। ব্রিকসে চীন আছে, ভারত আছে।

বাংলাদেশকে পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সম্পর্কের বহুধাকরণ করতে হবে। ব্যবসা–বাণিজ্যের সুযোগ ও ঋণের প্রাপ্যতার সুযোগকে বিস্তৃত করতে হবে। বাংলাদেশ যে ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করতে চাচ্ছে, সেটির সঙ্গে ব্রিকসে যোগদানকে আমি সামঞ্জস্যপূর্ণ হিসেবেই দেখি।

বাংলাদেশ যে ব্রিকসে যোগদানের আবেদন করেছে, সেটা হঠাৎ করে নয়। কারণ, আগেই আমরা নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হয়েছিলাম বড় অঙ্কের চাঁদা দিয়ে। সেটির অংশ হিসেবেই এখন ব্রিকসের সদস্য হওয়ার বিষয়টি যৌক্তিকভাবে এসেছে।

ব্রিকসের অনেকেই জি–২০–এর সদস্য। নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক যে ঋণ দিচ্ছে, তা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, সুশাসন আছে কি না, তা সামনে আসছে। ব্রিকস উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট হলেও গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার, বাক্‌স্বাধীনতা রক্ষা—এসব থেকে দূরে থাকতে পারবে তা নয়। ব্রিকসে এগুলো মানতে হবে। বাংলাদেশ ব্রিকসে যোগ দিলেও গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার ও বাক্‌স্বাধীনতা রক্ষা থেকে দূরে থাকতে পারবে বলে মনে হয় না।

  • মোস্তাফিজুর রহমান, বিশেষ ফেলো, সিপিডি