বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ১০ লাখ মানুষের অঙ্গীকার

নিজের নাম সই করে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের অঙ্গীকার করেছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা
ছবি: প্রথম আলো

নিজের নাম সই করে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের অঙ্গীকার করেছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। শায়েস্তাগঞ্জ থিয়েটারের পক্ষ থেকে একটি পথনাটক শেষে থিয়েটারের এক অভিনয়শিল্পী প্রতিমন্ত্রীর কাছে এসে তাঁর সই নেন।

আজ শনিবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সামাজিক ও আচরণগত পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে বাস্তবায়িত উজ্জীবন প্রকল্প এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেই অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী তাঁর নাম সই করেন। উজ্জীবন প্রকল্প এবং প্রথম আলো বন্ধুসভা যৌথভাবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১০ লাখ মানুষের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে। অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রীর হাতে এসব গণস্বাক্ষর হস্তান্তর করেন ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর ক্যাথরিন ডি স্টিভেনস।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, কন্যাশিশুদের স্বপ্ন দেখাতে হবে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের বিষয়টিতে জোর দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে বাল্যবিবাহমুক্ত করতে মন্ত্রণালয়ের নানা কার্যক্রম তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।

ইউএসএআইডির উজ্জীবন প্রকল্পের সহায়তায় বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধবিষয়ক ডিজিটাল লাইব্রেরি তৈরি করা হয়েছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ ডিজিটাল লাইব্রেরিতে ঢুকলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ লাইব্রেরিতে বিভিন্ন তথ্য সংযোজনের কাজটি করছে জনস হপকিনস সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১০ লাখ মানুষের গণস্বাক্ষর প্রতিমন্ত্রীর হাতে প্রতীকীভাবে হস্তান্তর করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুজ্জামান ডিজিটাল লাইব্রেরির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বাল্যবিবাহ বেশি হচ্ছে ঢাকা জেলায়। তথ্যটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য এবং নিটল-নিলয় গ্রুপের ভাইস চেয়ারপারসন সেলিমা আহমেদ, বাবা-মায়েদের প্রতি মেয়েসন্তানদের যাতে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করেন, সে আহ্বান জানান।

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভিন বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে অনলাইনে বিবাহ নিবন্ধনের বিষয়টিতে জোর দেন। তিনি জানান, এটি বাস্তবায়নে কাজ চলছে।

ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর ক্যাথরিন ডি স্টিভেনস বাল্যবিবাহের পরিণতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে তরুণদের সম্পৃক্ত করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন।

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে শায়েস্তাগঞ্জ থিয়েটারের পক্ষ থেকে একটি পথনাটক পরিবেশন করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানে প্রথম আলো বন্ধুসভার নির্বাহী সভাপতি মৌসুমী মৌ উজ্জীবন প্রকল্পের সঙ্গে গণস্বাক্ষর সংগ্রহে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশ–বিদেশে বন্ধুসভার ১৩০টি শাখা আছে। বন্ধুসভা অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছে। উজ্জীবনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় কাজের পরিসর বেড়েছে। তিনি তৃণমূল এবং দুর্গম এলাকায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে সিলেট, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার বন্ধুসভার সদস্যরা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।

ইউএসএআইডির উজ্জীবন প্রকল্পের প্রধান ফয়সাল মাহমুদ, সহকারী প্রধান জিনাত সুলতানা, প্রোগ্রাম অফিসার জাকিয়া হক বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ পরিস্থিতি এবং উজ্জীবন প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

জিনাত সুলতানা বলেন, বাল্যবিবাহের হার বেশি, বিশ্বের এমন ১০টি দেশের একটি বাংলাদেশ। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণীদের ৫৯ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর বয়সের আগে। বিবাহিতদের ১০ জনের মধ্যে ৫ জনকেই সন্তান জন্ম দিতে হচ্ছে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে।