৯ শর্তে পোশাক খাতের রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার অনুমতি পেল বিএম ডিপো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো
ছবি: সংগৃহীত

প্রায় সাড়ে চার মাস আগে অগ্নিবিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো লিমিটেড এবার পোশাক খাতের রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার অনুমোদন পেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তিন মাসের জন্য সাময়িক এই অনুমোদন দেয়। এ জন্য তারা ৯টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে।

৯টি শর্তের মধ্যে রয়েছে—বন্দরের অনাপত্তি, ডিপো-সংশ্লিষ্ট সব ধরনের নীতিমালা প্রতিপালন, অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা, বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনার নীতিমালা বাস্তবায়ন ইত্যাদি। শর্তগুলো প্রতিপালন করা না হলে তিন মাস পর এই অনুমোদন বাতিল হয়ে যাবে বলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চিঠিতে উল্লেখ করেছে।

আরও পড়ুন
গত ৪ জুন রাতে বিএম ডিপোতে আগুন থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল
ফাইল ছবি

গত ৪ জুন রাতে বিএম ডিপোতে আগুন থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ ৫১ ব্যক্তি নিহত হন। আহত হন দুই শতাধিক ব্যক্তি।
অগ্নিবিস্ফোরণে ডিপোর একাংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। দুর্ঘটনায় রপ্তানি পণ্যবাহী ১৫৪ কনটেইনার ও আমদানি পণ্যবাহী দুটি কনটেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

জানতে চাইলে বিএম ডিপোর মহাব্যবস্থাপক নুরুল আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোশাক খাতের রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমাদের অনুমোদন দিয়েছে। আজ বুধবার থেকেই এই রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু হবে।’

নুরুল আকতার বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে ডিপোতে সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা আরও উন্নত করা হয়েছে। আগুন নেভাতে পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপনের কাজ চলছে। কাস্টমসের শর্ত অনুযায়ী এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুমতি পাওয়া চট্টগ্রামের ২০টি কনটেইনার ডিপোর একটি বিএম ডিপো। দুর্ঘটনার আগে বিএম ডিপোতে মোট আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ৮ শতাংশ ব্যবস্থাপনা হতো।

আরও পড়ুন
গত ২২ আগস্ট খালি কনটেইনার সংরক্ষণ ও ওঠানো-নামানোর অনুমোদন পেয়েছিল ডিপোটি
ছবি: সংগৃহীত

দুর্ঘটনার পর বিএম ডিপোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে অন্য ডিপোগুলোর ওপর চাপ পড়ে। এ কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ, চট্টগ্রাম চেম্বার ও ডিপো সমিতি এই ডিপোতে (বিএম) আমদানি-রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দিতে এনবিআরের কাছে চিঠি দেয়।

এনবিআর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়ার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অনুশাসন প্রদান করে।

বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষও সব ধরনের কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন চেয়ে দুই দফায় কাস্টমসে আবেদন করে। এই আবেদনে সংস্কার কার্যক্রম ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার অগ্রগতি তুলে ধরে তারা।

তারপরই বিএম ডিপোকে সাময়িক সময়ের জন্য পোশাক খাতের রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

এর আগে ২২ আগস্ট খালি কনটেইনার সংরক্ষণ ও ওঠানো-নামানোর অনুমোদন পেয়েছিল ডিপোটি।

আরও পড়ুন

রপ্তানি পণ্য বিদেশি ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিএম ডিপো বন্ধ থাকায় অন্য সব ডিপোর ওপর চাপ বেড়ে যায়। এখন ডিপোটি পোশাক খাতের রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সাময়িক অনুমোদন পাওয়ায় এই চাপ কিছুটা কমবে। এতে রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা গতিশীল হবে।

পোশাক খাতের রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার অনুমতি দিলেও বিএম ডিপোকে বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনার অনুমতি দেয়নি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের চিঠিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থা প্রণীত ‘ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস বা আইএমডিজি কোড’ প্রতিপালন করার আগে বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনা করা যাবে না।

বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনার আগে ডিপোতে আলাদা ছাউনি ও চত্বরের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য যথোপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকতে হবে বলে কাস্টমসের চিঠিতে বলা হয়।

আরও পড়ুন
বিএম ডিপোকে বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনার অনুমতি দেয়নি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ
ছবি: সংগৃহীত

বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণেই ডিপোতে দুর্ঘটনা হয়েছিল বলে বন্দরের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল।

২০১১ সালে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের দুটি প্রতিষ্ঠানের ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে বিএম ডিপো চালু হয়। এই ডিপোর চেয়ারম্যান নেদারল্যান্ডসের নাগরিক রবার্ট প্রঙ্ক। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন মোস্তাফিজুর রহমান। পরিচালক হিসেবে আছেন স্মার্ট জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান।

কনটেইনার ডিপোগুলোর মূল কাজ রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা। কারখানা থেকে রপ্তানি পণ্য প্রথমে কাভার্ড ভ্যানে করে বেসরকারি এসব ডিপোতে পাঠানো হয়। কাভার্ড ভ্যান থেকে রপ্তানি পণ্য নামিয়ে রাখা হয় ডিপোর ছাউনিতে। এরপর তা কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ৯০ শতাংশ ব্যবস্থাপনা করা হয় এসব ডিপোতে। আমদানি পণ্যের এক-চতুর্থাংশও বন্দর থেকে এসব ডিপোতে এনে খালাস করা হয়। এর বাইরে খালি কনটেইনার সংরক্ষণ করাও ডিপোর কাজ।

আরও পড়ুন