স্বাধীন বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিকর্মীরা এখন নিঃসঙ্গ

শিক্ষাবিদ ও সমাজ-বিশ্লেষক আবুল কাসেম ফজলুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে আহমদ শরীফ চেয়ার অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশ ও রাজনীতি-ভাবনা তাঁর লেখার বিষয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য বই সংস্কৃতি, মুক্তিসংগ্রাম, কালের যাত্রার ধ্বনি, নৈতিক চেতনা: ধর্ম ও মতাদর্শ, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্দোলন, উনিশ শতকের মধ্যশ্রেণি ও বাঙলা সাহিত্য। তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলা নববর্ষ, আমাদের সংস্কৃতি ও রাজনীতির নানা দিক নিয়ে। গতকাল সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী মনোজ দে

আবুল কাসেম ফজলুল হক
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

একসময় আমাদের সংস্কৃতিচর্চার মধ্যে প্রতিবাদী চেতনা ছিল। সেটা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: সংস্কৃতি তো একটা বিমূর্ত ধারণা। ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে, জাতিতে-জাতিতে এই ধারণার বিভিন্নতা আছে। ব্যক্তি ও জাতির পুরো কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই সংস্কৃতির প্রকাশ ঘটে। অনেকে গান-নাচ-নাটক-বিনোদন—এসবের মধ্যেই সংস্কৃতিকে সীমাবদ্ধ রাখতে চান। এই বাস্তবতায় বলতে পারি, বাংলাদেশে জাতীয় সংস্কৃতির ধারণা সৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তান আমলে নানা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি প্রকাশ পেয়েছে।

এ ভূখণ্ডে একসময় হিন্দু সংস্কৃতি ও মুসলিম সংস্কৃতি পরস্পরবিরোধী রূপ পায়। পরিণতিতে বাংলা ও পাঞ্জাব ভাগের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তান। পাকিস্তান ছিল একটি অস্বাভাবিক রাষ্ট্র। তবে পাকিস্তানবাদীরা চেষ্টা করেছিলেন একটি পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ এবং পাকিস্তানি জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তুলতে। এর বিপরীতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে দেখা দেয় পূর্ব বাংলার বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় সংস্কৃতির ধারণা। সেই সংস্কৃতি ছিল প্রতিবাদী। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি, আওয়ামী লীগের ছয় দফা আন্দোলন, ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ—এ সবকিছুর মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বাঙালি সংস্কৃতি ও স্বাধীন বাংলাদেশ।

স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চিন্তাচেতনা বিশৃঙ্খলা ও বিপত্তির মধ্যে পড়ে যায়। ১৯৮০-এর দশক থেকে এনজিও এবং সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন দেখা দেয়। এ অবস্থায় আর আগেকার প্রতিবাদী সংস্কৃতির চেতনা বিকাশমান থাকেনি। এর প্রধান কারণ হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর চিন্তাচেতনা ও কর্মকাণ্ড দুর্বল ও বিকৃত হয়ে পড়ে। রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ভোগবাদ ও সুবিধাবাদ প্রবল হয়ে ওঠে। ফলে রাজনীতি ও সংস্কৃতি দুটোই তার সৃষ্টিশীলতা হারায়।

প্রশ্ন :

পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে সাংস্কৃতিক আন্দোলন রাজনৈতিক আন্দোলনের শর্তও তৈরি করে দিয়েছিল। সংস্কৃতি তার সেই স্বতন্ত্র ধারা অনেকটাই হারিয়েছে। সংস্কৃতিচর্চা কি ক্ষমতাসীন রাজনীতির মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: সে সময়ে রাজনীতিবিদ, লেখক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের একাংশ পাকিস্তানবাদের সমর্থক ছিলেন, অনেকে আবার নিষ্ক্রিয়তার পথ অবলম্বন করেছিলেন। আবার লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীদের একাংশ এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি সংস্কৃতির প্রবল সমর্থক ছিলেন। এ ধারার ছাত্র-তরুণ এবং সাংস্কৃতিক কর্মীদের অধিকাংশ ছিলেন বামপন্থী চিন্তাধারার অনুসারী। রাজনীতির দিক থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সে সময় কিন্তু আওয়ামী লীগের তেমন কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠন ছিল না। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর পর্যায়ক্রমে বামপন্থী সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং এদের নেতা-কর্মীদের অনেকে আওয়ামী লীগের সমর্থক হয়ে যান। স্বাধীনতার পর যে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, তার মধ্যে সাংস্কৃতিক কর্মীরাও পড়ে যান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ড এবং ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেনাপতি জিয়াউর রহমান ও সেনাপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রায় ১৫ বছর দেশের ক্ষমতায় থাকেন। এ পর্যায়ে দেশে সাংস্কৃতিক চিন্তা ও কর্মধারার বিকাশ স্থবির হয়ে পড়ে। শিল্পী, লেখক-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই নানা সুবিধার জন্য সামরিক সরকারের লেজুড়বৃত্তি করেছেন। দেশের বেশির ভাগ বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিকর্মী সেই ধারা থেকে এখনো বের হতে পারেননি।

প্রশ্ন :

গ্রামগঞ্জে আমরা একসময় যাত্রাপালার চর্চা দেখতে পেতাম। নানা বিধিনিষেধে তার চর্চা এখন কমে গেছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: গ্রামাঞ্চলে যাত্রা বা পালাগান ইত্যাদি গ্রামীণ সংস্কৃতির যেসব চর্চা ছিল, বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতায় সেগুলো প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতায় নতুন অনেক কিছু সৃষ্টি করা এবং প্রগতির ধারায় এগিয়ে চলার অনেক সম্ভাবনা আছে। কিন্তু জাতীয় জীবনে স্বাধীন চিন্তাশীলতা নিয়ন্ত্রণ করার নানা চেষ্টা শাসকদের দিক থেকে আছে।

বাস্তবে দেখা যায়, পরিস্থিতি এমন যে স্বাধীনভাবে যাঁরা চিন্তা করতে চান, তাঁরা সেটা করার কোনো সাহসই পাচ্ছেন না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো নিবর্তনমূলক আইন করা হয়েছে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে জননিয়ন্ত্রণের জন্য এ ধরনের আইন তৈরি করা কিংবা জারি রাখার চেষ্টা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। যাঁরা উন্নত চিন্তাচেতনার চর্চা করেন, তাঁদের জন্য স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে সব দলেরই রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী ও বুদ্ধিজীবীরা লাভবান হবেন। চিন্তা দমনের নীতি কারও জন্যই ভালো হয় না।

ইতিহাস থেকে সবার শিক্ষা নেওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যায়, ইতিহাস থেকে কেউই শিক্ষা নিতে চায় না। বাংলাদেশ এখন যে রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে রয়েছে, তার পরিবর্তন ও উন্নতির জন্য প্রায় দেড় হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি ও রাজনীতির চর্চা একান্ত দরকার।

প্রশ্ন :

পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের ক্ষেত্রেও নানা বিধিনিষেধ আরোপ হচ্ছে। উৎসব কি তার স্বতঃস্ফূর্ততা হারাচ্ছে?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: ঢাকা শহর, আগেকার জেলা শহর, মহকুমা শহরে একসময় বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপিত হতো না। গ্রামাঞ্চলে বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপিত হতো। সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনে নানা পরিবর্তন এসেছে। ষাটের দশকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে নাগরিক জীবনে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের রীতি দেখা দিয়েছে।

উনিশ শতকে কলকাতায় চৈত্রসংক্রান্তিতে হিন্দু মেলা অনুষ্ঠিত হতো। এর মর্মে ছিল ব্রিটিশ শাসনের অবসান এবং স্বাধীন ভারতীয় ও বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ সাধন। গত শতকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপনের মূল সুর ছিল আইয়ুব খানের শাসনের বিরোধিতা। সরকারি বাধা অগ্রাহ্য করে সে সময় রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপিত হয়েছে। একই সময়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল। ছায়ানট যাঁরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাঁদের মধ্য থেকেই বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের আনুষ্ঠানিকতা দেখা দিয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও নববর্ষ উদ্‌যাপনের আনুষ্ঠানিকতায় যুক্ত হয়। সে সময় শিক্ষকদের মধ্যে বাঙালি সংস্কৃতির চেতনা প্রবল ছিল। মুসলিম লীগ সমর্থক শিক্ষকেরা নববর্ষ উদ্‌যাপনের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু তাঁরা বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের বিরোধিতা করতে গিয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রচলন ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি। সূচনা থেকেই মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধিতা করেছেন আওয়ামী লীগ-বিরোধী ধর্মভিত্তিক কিছু সংগঠন ও কিছু ব্যক্তি। তবে তাঁদের শক্তি বৃদ্ধি পায়নি। কিন্তু মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধিতায় এখনো তাঁরা সক্রিয় আছেন। আমাদের এমন কিছু করা উচিত হবে না, যার মধ্য দিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি বৃদ্ধি পায়। পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করতে হবে আমাদের জাতীয় চৈতন্যের বিকাশ ও জাতীয় সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য।

প্রশ্ন :

পয়লা বৈশাখের মতো উৎসব এলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়। এই বিভেদ-বিভাজনের উৎস কোথায়?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: বাঙালি জাতীয়তাবাদী প্রগতিশীল শক্তির দুর্বলতার কারণেই এ ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এই পক্ষ-বিপক্ষ যদি চলতে থাকে এবং প্রগতিশীল ধারার উন্নতিশীল চিন্তাচেতনার উদ্ভাবন যদি না ঘটে, তাহলে প্রতিক্রিয়াশীলেরা নিজেদের শক্তি সঞ্চয় করবে। এ ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো প্রগতিশীল ধারা বিকাশের সুযোগ তৈরি করতে পারে।

প্রশ্ন :

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্ষমতার ঘেরাটোপের মধ্যে আমরা সংস্কৃতিচর্চা হতে দেখছি। ক্ষমতার কেরানিগিরি করা কি সংস্কৃতির কাজ?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তিতে অনেক বুদ্ধিজীবী এখন সক্রিয় রয়েছেন। কিন্তু দল করেও দলকে উন্নত চিন্তাচেতনার মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার সুযোগ গ্রহণ করা যায়। বাংলাদেশে সেই চেষ্টাও মোটেই দেখতে পাচ্ছি না। এখানে দলীয় বুদ্ধিজীবীরা ক্ষমতাসীন দলগুলোর কেরানিগিরিতেই লিপ্ত। এর মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশের একটা বাস্তবতা হলো, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলোর বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী ও শিল্পী সংখ্যায় নগণ্য। দলীয় সংকীর্ণতার বাইরে থেকে যাঁরা স্বাধীনভাবে চিন্তা করেন ও মত প্রকাশ করতে চান, তাঁরা এখন নিঃসঙ্গ।

প্রশ্ন :

পাকিস্তানের সঙ্গে সংগ্রাম করতে গিয়ে আমরা রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ঘটিয়েছিলাম। এখন কি আমাদের আত্মপরিচয়ের পরিসর আরও বিস্তৃত করার প্রয়োজন বোধ করেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: মানুষের ইতিহাসের সূচনা থেকেই সংস্কৃতি ছিল ও আছে। কিন্তু ধারণা হিসেবে সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে অনেক পরে। আধুনিক যুগে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতিরাষ্ট্র—এসব ধারণা নিয়ে চিন্তার চর্চা সংস্কৃতির অপরিহার্য উপাদান। এসব রাজনৈতিক ধারণা বাংলাদেশের বাস্তবতায় আমূল পুনর্গঠন দরকার।

দেখা যায় যে যাঁরা ক্ষমতায় থাকেন, তাঁরা সব সময় ভিন্ন চিন্তাচেতনা ও কাজের ধারাকে বিকশিত হতে দিতে চান না। সে অবস্থায় অনিবার্যভাবেই দেখা দেয় সংগ্রাম। বাংলাদেশের সেই ধরনের সংগ্রাম সত্তরের দশক শেষ হতে না হতেই হারিয়ে গেছে। আশির দশকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করেছে সরকার উৎখাত ও রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয়তাবাদ, আন্তর্জাতিকতাবাদ ও বিশ্বায়ন সম্পর্কে কোনো পরিচ্ছন্ন ধারণা পাওয়া যায় না। দেশের অধিকাংশ লেখক, গবেষক ও চিন্তাবিদের মধ্যেও এসব বিষয়ে গভীর চিন্তা খুঁজে পাওয়া যায় না।

শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বেই এখন এ সমস্যা প্রকট। পশ্চিমা পরাশক্তির অন্ধ অনুকরণে গড়ে ওঠা রাজনীতি ও বুদ্ধিজীবিতা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আত্মশক্তির উপলব্ধি এবং জাতীয় সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শূন্যতা কাটিয়ে উঠতে হবে। বাংলাদেশে চিন্তার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ও কাজের ক্ষেত্রে সংগ্রাম এখন অপরিহার্য। সবকিছুতে যুক্তিশীল চিন্তা ও বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি কাম্য। আমাদের চিন্তা ও কাজের পরিসর অবশ্যই বড় করা প্রয়োজন।