মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকায় প্রতিক্রিয়াশীলেরা এগিয়ে যাচ্ছে

জাতীয় প্রেসক্লাবে সামাজিক সম্প্রীতি সংলাপে বক্তব্য দেন বদিউল আলম মজুমদার। ঢাকা, ২৩ আগস্ট
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

দেশে উন্নয়ন ঘটলেও মানুষের উন্নতি হয়নি। ধর্মান্ধতার সামাজিকীকরণ ঘটেছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকায় প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে।

আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সামাজিক সম্প্রীতি সংলাপে এসব কথা উঠে আসে। দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার এবং ফ্রিডম অব রিলিজিওন অর বিলিফ লিডারশিপ নেটওয়ার্কের (ফোর্ব) উদ্যোগে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

সংলাপে সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, সম্প্রীতির বিষয়গুলো পরিবার থেকেই শেখাতে হবে। সব রাষ্ট্র বা সরকারের ওপর চাপানো যাবে না। অসাম্প্রদায়িক চেতনার শিক্ষা ঘর থেকে তৈরির আহ্বান জানান তিনি। এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, শিক্ষাও এখন আগের মতো নেই। সবাই শুধু টাকা ও লোভের পেছনে ছোটে। তিনি নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত না করার আহ্বান জানান।

একে অপরের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হতে পারলে, মানসিকতার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না করতে পারলে উন্নয়ন হবে কিন্তু উন্নতি হবে না বলে জানান হাঙ্গার প্রজেক্টের এদেশীয় পরিচালক ও বৈশ্বিক ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আমরা সংকটের মধ্যে আছি। বিশ্বে ধর্মান্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশেও তা হচ্ছে। এটা বারুদের স্তূপ তৈরি করবে। কারণ, রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, জাতিগত অসহিষ্ণুতা এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা মিলে বারুদের স্তূপ সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

সংলাপে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতাসহ নানা বিষয়ে নিজেদের মতামতের পাশাপাশি প্রশ্নও করেন।  

সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আওয়ামী লীগকে বলা হয় তুলনামূলক প্রগতিশীল দল। কিন্তু তারা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও ধর্মান্ধতা বাড়ছে। এগুলো হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকার কারণে। এতে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় উদার যারা, তারা পিছিয়ে যাচ্ছে। শিল্প–সংস্কৃতির জন্য রাষ্ট্রের কোনো মেগা প্রকল্প নেই। এর জন্য প্রগিতিশীলরা কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে।

এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, সংখ্যানুপাতিক হারে যারা সংখ্যায় কম, তাদের ক্ষমতায়ন করতে না পারলে এই সম্প্রীতি তৈরি হবে না। যারা পিছিয়ে আছে, তাদের যদি আইনের মাধ্যমে, ভোটের মাধ্যমে সমানুপাতে আনা যায়, তাহলেই সম্প্রীতি তৈরি হবে। বহুত্ববাদকে ধারণ ও লালন করতে হবে। সংখ্যালঘু কমিশন করতে হবে। যেখানে তাদের অধিকারের বিষয়ে কাজ হবে। পাশাপাশি সংসদে সব জাতি–ধর্মের মানুষের উপস্থিতি থাকতে হবে। সমাজে ধর্মান্ধতা বাড়ছে। কিন্তু এগুলোর সমাধানও সহজ, যদি কেউ তা চায়। আর যদি এটাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে কেউ চায়, তখনই তা জটিল হয়ে যায়।

দেশের সংবিধান পড়লেই মনে হবে এটা বাঙালি রাষ্ট্র, মুসলমানের রাষ্ট্র—এ কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, এর বাইরের মানুষদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। সম্প্রীতি তখনই আসবে, যখন অন্য ধর্ম, জাতির মানুষকে স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধার জায়গায় নেওয়া যাবে।

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যতে শোক জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া ছাত্রলীগের প্রায় ২০০ কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ধর্মান্ধতা বাড়তে বাড়তে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে চলে গেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব যেভাবে হচ্ছে, তার মধ্যে ধর্মান্ধ শক্তিকে যদি বাড়তে দেওয়া হয়, তবে আগামী ২০ বছরে এই দুই দল মিলেও মৌলবাদী শক্তিকে ঠেকাতে পারবে না। শিক্ষক হিসেবে ক্লাসে হিসাব করে কথা বলতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, স্বপন কুমার, হৃদয় মণ্ডলের ঘটনা খুব বেশি আগের নয়। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের জন্য। বাংলাদেশকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।

সংলাপে বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের উপপ্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ রফিক–উল ইসলাম, সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা, ফোর্বের এদেশীয় পরিচালক শাহনাজ করীম ও দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের কর্মসূচি পরিচালক নাছিমা আক্তার।