নারী-উদ্যোক্তাদের রেসিপিতে ছড়িয়ে গেল ইফতার আনন্দ

যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে—চিরায়ত একটি প্রবাদ। এই প্রবাদের সত্যতা মিলছে এখন ঘরে ঘরে। নানামুখী চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা জয় করে নারীরা এগিয়ে চলছেন তাঁদের স্বপ্নপূরণের পথে। নিজেরা সফল হচ্ছেন। অনুপ্রাণিত করছেন অন্যদের। ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে।

রূপক অর্থে ‘চুল বাঁধা’র মতো নানাবিধ কাজ তো নারীরা প্রতিনিয়ত করছেনই, সেই সঙ্গে রান্নার কাজটিও করছেন পুরোদমে। শুধু পরিবারের জন্যই নয়, নিজের রান্নাঘর থেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক নারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ‘ক্লাউড কিচেনে’র মাধ্যমে তাঁরা গড়েছেন নিজ নিজ পরিচিতি।

এমনই আত্মনির্ভরশীল নারী-উদ্যোক্তাদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে আড়ং ডেইরি এবং প্রথম আলো ডটকম। শখের রান্না থেকে যাঁরা এখন উদ্যোক্তা হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন—তেমন পাঁচজন নারীর গল্প থাকছে এই আয়োজনে।

‘তানজিল কিচেনস’-এর স্বত্বাধিকারী তানজিল আহসান বলেন, ‘২০১৭-এর আগে আমি ছিলাম করপোরেট জগতের মানুষ। ব্যক্তিগত কারণে চাকরিটা ছেড়ে দেওয়ার পর ভাবলাম, যেহেতু রান্না করতে পছন্দ করি, সেটা দিয়েই টুকটাক ব্যবসা করি না কেন? যেই ভাবা সেই কাজ। শুরু করলাম আমার কিচেন। এখন আমি স্বাবলম্বী।’

‘আমার পেজের যাত্রা শুরু ২০১৬ সালে। আসলে নিজের হাতখরচ চালাতে গিয়েই কেক বানানো শুরু করলাম। ধীরে ধীরে এর পসার বাড়তে লাগল। আমার বানানো কেক আর ডেজার্ট সবাই এত পছন্দ করতে শুরু করল যে হাতখরচের টাকার জোগান তো হলোই, এখন আমি পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী।’ নিজের উদ্যোক্তা-জীবনের কথা এভাবেই বললেন ‘কেক আর্ট বাই তারিন’ ফেসবুক পেজের স্বত্বাধিকারী তারিন আক্তার।

‘ইয়াম্মি স্ন্যাকসে’-এর উদ্যোক্তা শাহীনা আক্তার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই রান্নার প্রতি ঝোঁক ছিল। সবাই আমার রান্না পছন্দ করতেন। শখের বসেই ফেসবুকে রান্নার পেজ খুলে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। এখন আমার কিচেনের রান্না বিভিন্ন মানুষ প্রতিদিন ফরমাশ করে নেন। এটা আমার জন্য আনন্দের।’

‘আমি আগে চাকরি করতাম। সন্তানের দেখাশোনার জন্য কর্মজীবন থেকে সরে আসি। আমার শিশুসন্তান যখন বাইরের খাবার শুরু করল, তখন আমি নিরাপদ আর মজাদার খাবার তৈরির প্রতি মনোযোগী ছিলাম। মনে হলো, এমন নিরাপদ খাবার তো আমি অন্য শিশুদের জন্যও তৈরি করতে পারি। যাতে করে কর্মজীবী মায়েরা তাঁদের শিশুসন্তানের খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় না ভোগেন।’ বললেন ফেসবুক পেজ ‘খ-তে খাঁটি’র স্বত্বাধিকারী কাজী নওশীন লায়লা। তিনি উদ্যোক্তা হয়ে শুধু আর্থিকভাবে স্বাবলম্বীই হননি, কর্মজীবী মায়েদের জন্য আশীর্বাদ তাঁর পেজের খাবার।

‘পাঁচমিশালী’ পেজের স্বত্বাধিকারী কল্পনা আক্তারের যাত্রা শুরু হয়েছিল করোনা মহামারির সময়। তিনি বলেন, ‘করোনার সময় হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ ছিল। কিন্তু সবাই একটু ভিন্ন হাতের রান্না খুঁজতেন। ছোট্ট পরিসরে তখন আমি আমার কিচেনের কাজ শুরু করেছিলাম। এখন নিয়মিত আমার তৈরি খাবার বিভিন্ন শ্রেণির ক্রেতা অর্ডার করে নিচ্ছেন। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে এটা আমার জন্য বেশ মানসিক প্রশান্তির ব্যাপার।’

পবিত্র রমজান মাসে ‘ইফতার ডিলাইট’ নামের ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই পাঁচজনের রান্নাঘর থেকে তাঁদের বিশেষ রেসিপির ইফতার তৈরি হয়। যেগুলো তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে আড়ং ডেইরির নানারকম পণ্য।

গত বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) ইফতারের ঠিক আগমুহূর্তে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘরমুখো মানুষসহ অন্যদের মাঝে তুলে দেওয়া হয় তাঁদের বানানো ইফতারের প্যাকেট। নিজেরা উপস্থিত থেকেই এই ইফতারের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন ক্লাউড কিচেনের উদ্যোক্তা এই পাঁচজন নারী।

‘এটা আমাদের জন্য খুবই মানসিক পরিতৃপ্তির একটি বিষয় ছিল। রান্নাঘর থেকে তো কত রকমের খাবারই বিভিন্নজনকে ডেলিভারি দিই। কিন্তু এমন আয়োজনে থাকতে পেরে খুব শান্তি পেয়েছি।’ এভাবেই নিজের অনুভূতি জানান তারিন আক্তার।

কাজী নওশীন লায়লা বলেন, ‘আমরা ইফতার তৈরি করেছি। সবার সঙ্গে সেই ইফতার ভাগাভাগি করেছি। এ রকম ব্যতিক্রমী উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে।’

‘রান্নাঘর থেকে তো নিয়মিত রান্না করা খাবার আমার ক্রেতাদের পাঠাই। কিন্তু ঘরমুখো মানুষদের এমনভাবে ইফতার হাতে তুলে দেওয়ার মাঝে যে আনন্দ, তা আসলে বলে বোঝানো যাবে না।’ বললেন তানজিল আহসান।

আড়ং ডেইরি এবং প্রথম আলো ডটকমকে ধন্যবাদ জানিয়ে কল্পনা আক্তার বললেন, ‘আমার মতো যাঁরা উদ্যোক্তা আছেন, তাঁদের তো বটেই, সামর্থ্যমতো সবাইকে আমি অনুরোধ করব, নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইফতার ও ঈদের খুশি ভাগাভাগির করে নিতে। তাহলেই পরিপূর্ণতা পাবে ঈদের আনন্দ।’