কিশোরী–তরুণীদের ক্ষমতায়নে ব্র্যাকের ‘স্টার’ কর্মসূচির অংশীজন হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

‘স্টার’ কর্মসূচির অংশীদারত্ব অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্র্যাকের কর্মকর্তারা
ছবি: প্রথম আলো

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কিশোরী–তরুণীদের ক্ষমতায়ন করতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের ‘স্টার’ কর্মসূচির অংশীজন হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ও ব্র্যাক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত চুক্তি সই হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্র্যাকের কর্মকর্তারা।

ব্র্যাক ২০১২ সালে দ্য স্কিলস ট্রেইনিং ফর অ্যাডভান্সিং রিসোর্সেস (স্টার) কর্মসূচি চালু করে। এর সঙ্গে সরকারের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো, জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) রয়েছে। স্টারের আওতায় পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়া তরুণ ও তরুণীদের ‘ওস্তাদ–সাগরেদ’ মডেলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অধীনে শিক্ষানবিশ হিসেবে হাতে–কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যা কর্মসংস্থানে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বেশি কার্যকর বলে উল্লেখ করেন আলোচকেরা।

আজকের অনুষ্ঠানে স্টার সম্পর্কে তুলে ধরতে গিয়ে ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক তাসমিয়া তাবাসসুম রহমান বলেন, বর্তমানে দেশের ৫২টি জেলায় স্টার কর্মসূচির কার্যক্রম আছে। এর আওতায় এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৬৪ ভাগ নারী এবং ১০ ভাগ শারীরিক প্রতিবন্ধী। এই প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮০ ভাগেরই কর্মসংস্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে  প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী ৬২ শতাংশ মেয়ের বাল্যবিবাহ ঠেকানো গেছে।

দেশের ১ কোটি ২০ লাখ তরুণ–তরুণীর এখনো প্রশিক্ষণ প্রয়োজন উল্লেখ করে তাসমিয়া তাবাসসুম রহমান বলেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ২৯ ভাগ তরুণ–তরুণী পড়াশোনা বা কাজ করে না এবং তাদের প্রশিক্ষণ নেই। ব্র্যাক ও বাংলাদেশ সরকার প্রান্তিক ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর শিক্ষা এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ দিতে একসঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা করছে।

স্টার কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে সাভারের সুমাইয়া আক্তার। করোনার সময় তাঁর বাবা দুর্ঘটনার শিকার হন। এরপর তাঁর মা একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেন। কিন্তু মায়ের একার আয়ে অসুস্থ বাবা ও চার ভাইবোনের সংসার চলছিল না। পরে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা সুমাইয়া কাজের সন্ধান করতে থাকে। একপর্যায়ে স্টার কর্মসূচির আওতায় সে একটি দোকানে কম্পিউটারের কাজ শেখে।

অনুষ্ঠানে সুমাইয়া জানায়, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর এখন একটি বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) খণ্ডকালীন হিসেবে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয় সে। মাসে বেতন আট হাজার টাকা।

এই কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সাভারের মৌসুমী আক্তার। তিনি বলেন, স্টার কর্মসূচির আওতায় বিউটি পার্লারের কাজের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। এখন তাঁর দুটি বিউটি পারলার আছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য অফিস অব গ্লোবাল ওমেনস ইস্যুর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ক্যাটরিনা ফটোভাত বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নকে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। আজকের মেয়েরা আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবে। আর নারীরা বিশ্ব জনসংখ্যার বড় অংশ। লৈঙ্গিক সমতার জন্য নারীরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ধরনগুলো চিহ্নিত করা ছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। বিশ্বব্যাপী নারীরা নানা ধরনের সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। এ কারণে আমি এই কর্মসূচি নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত। এর অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত।’

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা (তরুণীরা) শুধু দক্ষই হচ্ছে না, আত্মবিশ্বাসীও হচ্ছে। এতে বাল্যবিবাহও বন্ধ হচ্ছে। মেয়েরা শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পরিবারের সম্পদ হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশিদারত্ব নিয়ে আমি খুবই উচ্ছ্বসিত। আশা করি, স্টার আরও বড় কিছু করবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফাভ, ব্র্যাকের শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও অভিবাসনবিষয়ক পরিচালক সাফি রহমান খান প্রমুখ।