মামলা করতে হলে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টকে ২৫% অর্থ জমা দিতে হবে

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের কাছে দুটি করবর্ষে আয়কর বাবদ ২১৫ কোটি টাকা দাবি করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর বিরুদ্ধে আইনিপ্রক্রিয়া শুরু করে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট। এই প্রক্রিয়ায় আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা (আয়কর রেফারেন্স) করতে হলে এনবিআরের দাবি ও করদাতার স্বীকৃত দায়ের মোট পার্থক্যের ২৫ শতাংশ অর্থ এনবিআরে জমা দিতে হয়। এই অর্থ মওকুফ বিষয়ে এনবিআরে আবেদন (রিভিউ) করে বিফল হয় ট্রাস্ট।

এনবিআরের এই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের করা রিট আজ সোমবার খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রাষ্ট্রপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের কাছে ২০১১-১২ এবং ২০১২-১৩ করবর্ষে আয়কর বাবদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পাওনা ২১৫ কোটি টাকা। এর বিরুদ্ধে প্রথমে কমিশনারের (আপিল) কাছে ও পরে আয়কর ট্রাইব্যুনালে মামলা করে গ্রামীণ টেলিকম। আয়কর ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আয়কর রেফারেন্স মামলা করার সুযোগ রয়েছে। এই মামলা করার পূর্বশর্ত হিসেবে ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১৬০(১) ধারা অনুসারে আয়কর দাবি ও করদাতার স্বীকৃত দায়ের মোট পার্থক্যের ২৫ শতাংশ অর্থ এনবিআরে জমা দিতে হয়। এই অর্থ মওকুফ চেয়ে এনবিআরে আবেদন করে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট, যা নামঞ্জুর হয়। এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন (রিভিউ) করে গ্রামীণ টেলিকম। পুনর্বিবেচনার আবেদন ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর নামঞ্জুর হয়।

মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর এনবিআরের দেওয়া সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে ওই বছরই হাইকোর্টে রিট করে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। একই সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের কাছ থেকে দাবি করা আয়কর আদায় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রুল খারিজ করে রায় দেন হাইকোর্ট।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান ও আইনজীবী সুমাইয়া ইফরিত বিনতে আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তাহমিনা পলি।  

রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আয়কর রেফারেন্স দায়েরের জন্য অর্থ মওকুফ চেয়ে আবেদন করে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট। আবেদন নামঞ্জুর হলে তারা রিট করে। রুল ডিসচার্জ (খারিজ) হওয়ার ফলে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টকে এখন ২৫ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে মামলা করতে হবে। তা না হলে দুটি করবর্ষের জন্য আয়কর বাবদ পাওনার (২১৫ কোটি টাকার বেশি) পুরো টাকাই গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টকে পরিশোধ করতে হবে।