সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত, লড়াই চলছে
সুদানে সন্ত্রাসীদের হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) আজ শনিবার খুদে বার্তায় এ কথা জানায়।
আইএসপিআর জানায়, সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘের ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আটজন। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যুদ্ধ চলমান রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার শোক
সুদানের বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ৬ জন বীর শান্তিরক্ষীর শাহাদাত বরণ এবং আরও ৮ জনের আহত হওয়ার সংবাদে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিপুল অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; বীরদের এই আত্মত্যাগ একদিকে জাতির গৌরব, অন্যদিকে গভীর বেদনার।’
প্রধান উপদেষ্টা নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আহত শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই দুঃসময়ে সরকার শান্তিরক্ষীদের পরিবারগুলোর পাশে থাকবে।
বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ। তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা আরও জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
নিহত শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
ড্রোন দিয়ে হামলা
বার্তা সংস্থা এএফপি হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সুদানের কোরদোফানের কাদুগলি এলাকায় জাতিসংঘের ভবনে হামলা হয়েছে। এই হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন।
এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে সুদানের সেনা–সমর্থিত সরকার। সরকারের এক বিবৃতিতে, এ হামলার জন্য সরকারবিরোধী আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে দায়ী করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ড্রোন দিয়ে জাতিসংঘের ওই ভবনে হামলা চালানো হয়েছে।
বিবৃতিতে সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বাধীন সার্বভৌম পরিষদ (সোভারেনটি কাউন্সিল) এই হামলাকে ‘বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধি’ বলে উল্লেখ করেছে।
কাদুগলি শহরে গত নভেম্বরের শুরুতে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। শহরটি প্রায় দেড় বছর ধরে আরএসএফ অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
কোরদোফান একটি বিস্তৃত কৃষিভিত্তিক অঞ্চল, যা তিনটি রাজ্যে বিভক্ত। এটি পশ্চিমে আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত দারফুর এবং উত্তর, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী-নিয়ন্ত্রিত এলাকার মাঝখানে অবস্থিত।
সরবরাহ লাইন বজায় রাখা ও সেনা স্থানান্তরের জন্য কাদুগলির অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে আধাসামরিক আরএসএফ দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই অঞ্চলে তারা যোদ্ধা, ড্রোন ও মিত্র মিলিশিয়া মোতায়েন করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সুদানের মধ্যাঞ্চলের চারপাশে সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা ভেদ করার লক্ষ্যেই আরএসএফ এই পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে খার্তুম পুনর্দখলের পথ তৈরি করা যায়।
আরএসএফের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
বিবিসি জানায়, আরএসএফ ২০১৩ সালে গঠিত হয়। মূলত জানজাওয়িদ মিলিশিয়ারা আরএসএফ গঠন করে। এই মিলিশিয়ারা দারফুরে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে নৃশংস চালিয়েছিল। দারফুরের কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান, অ-আরব জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এরপর সুদানের জেনারেল হামদান দাগালো (হেমেদতি নামে পরিচিত) আরএসএফকে একটি শক্তিশালী বাহিনী রূপান্তরিত করেন। তিনি আরএসএফের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই আরএসএফ ইয়েমেন ও লিবিয়ায় সংঘাতে হস্তক্ষেপ করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জেনারেল দাগালো সুদানের কিছু স্বর্ণখনিও নিয়ন্ত্রণ করেন। অভিযোগ আছে যে তিনি এই ধাতু সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) পাচার করেন।
সুদানের সেনাবাহিনীর অভিযোগ, আরএসএফকে সমর্থন দেয়ে আমিরাত। আমিরাতের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলা চালানোর অভিযোগও করে সেনাবাহিনী। যদিও তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশে আমিরাত এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সুদানের সেনাবাহিনী পূর্ব লিবিয়ার শক্তিশালী নেতা জেনারেল খলিফা হাফতারকেও আরএসএফকে সমর্থন দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে। হাফতার সুদানে অস্ত্র পাচারে সাহায্য করেছেন এবং আরএসএফের পক্ষে যোদ্ধা পাঠিয়েছেন বলেও অভিযোগ সেনাবাহিনীর।