জোরজবরদস্তির বাল্যবিবাহ না মেনে থানায় গেল নবম শ্রেণির ছাত্রী

বাল্যবিবাহ
প্রতীকী ছবি

নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না বাবা-মা। দাদা-দাদি ওই ছাত্রীকে পাশের উপজেলার একটি গ্রামে নিয়ে জোর করে বাল্যবিবাহ করতে বাধ্য করেন। বিয়ের দুই ঘণ্টা পর বাড়িতে ফিরে কৌশলে ওই ছাত্রী প্রতিবেশী এক মামিকে নিয়ে থানায় গিয়ে অভিযোগ দেয়। পরে ওই ছাত্রীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দালালসহ কথিত বরকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়।

ঘটনাটি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শোমসপুর ইউনিয়নের। বাল্যবিবাহের শিকার ওই ছাত্রী স্থানীয় একটি মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী। গতকাল বুধবার সকালে দালালের মাধ্যমে তাকে পাশের কুমারখালী উপজেলায় নিয়ে তার দাদা-দাদি বিয়ে দেন। এ ঘটনায় বিকেলে ওই ছাত্রী থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ রাতেই তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে কথিত বর নূর হোসেন (২৫) ও বিয়ের দালাল রমজান আলী শেখকে আটক করেন। এ সময় ওই ছাত্রীর দাদা-দাদি আত্মগোপন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার বিশ্বাস ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নূর হোসেনকে দুই সপ্তাহ এবং দালাল রমজানকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেন কুমারখালী উপজেলার নন্দিগ্রাম-ঘাসখাল গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। আর দালাল রমজান একই উপজেলার গোপালপুর গ্রামের জামাল শেখের ছেলে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।

সাহসী ওই ছাত্রী জানায়, বাবা-মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাদা-দাদি তাকে জোর করে ধরে নিয়ে বিয়েতে বসতে বাধ্য করেন। বিয়ের দুই ঘণ্টা পর তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। এ সুযোগে সন্ধ্যায় সে থানায় গিয়ে সরাসরি অভিযোগ করে। ন্যায়বিচার পেয়ে সে খুশি। সে তার পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চায়।

বাল্যবিবাহের শিকার ওই ছাত্রীর বাবা পেশায় ইটভাটার শ্রমিক। ওই ছাত্রীর মা প্রথম আলোকে বলেন, দালালের খপ্পরে পড়ে তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি জোর করে মেয়েকে নিয়ে বিয়ে দেন; কিন্তু মেয়ে পড়তে চায়। বাবাও মেয়েকে পড়াতে চান। নিজের কোনো জমি নেই। স্বামী কাজ করে সংসার চালান। অল্প বয়সী মেয়েকে বিয়ে দিয়ে শ্বশুর-শাশুড়ি তাঁদের বিপদে ফেলেছেন।

খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা হাবিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ওই ছাত্রী তাঁর কাছে এসে ঘটনা খুলে বললে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেন। ছাত্রী ও ছেলেপক্ষের কথা শুনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ছাত্রীটির বাবা-মা বিয়েতে রাজি না। কিন্তু দাদা-দাদি ও দালাল মিলে কাজটি করেছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষের কথা শুনে বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে সাজা দেওয়া হয়েছে।