পণ্য বিক্রির স্বার্থে বিদেশিরা বাংলাদেশকে নানা চাপ দেয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন
ফাইল ছবি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, বিদেশিরা পণ্য বিক্রির উদ্দেশে নিজেদের স্বার্থ আদায়ে বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের চাপ দেয়। বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে এদিন দুপুরে দেশে ফেরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বিদেশিদের চাওয়া–পাওয়া ও চাপ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশে যেহেতু মান–ইজ্জত বেড়েছে ও উন্নয়ন হচ্ছে, ফলে সবাই আমাদের কাছে তাদের পণ্য বিক্রি করতে চায়। তাই আমাদের সঙ্গে এসে দেখা করে। আগে এত মানুষ দেখা করত না। বিদেশিরা মূলত তাদের পণ্য বিক্রি করতে আসে। এ জন্য চাপ সৃষ্টি করে, যেন তার কাছ থেকে পণ্য কেনা হয়। যুক্তরাষ্ট্র তাদের পণ্য বিক্রি করতে চায়, ফ্রান্স তাদের পণ্য বিক্রি করতে চায়, যুক্তরাজ্য তাদের পণ্য বিক্রি করতে চায়, ইউরোপ তাদের পণ্য বিক্রি করতে চায়।’

যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাইরের দেশ থেকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হলে বাংলাদেশের জনগণও তাদের স্যাংশন দেবে।

কাদের ওপর এবং কেন বাংলাদেশ নিষেধাজ্ঞা দেবে—সে প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারি। পারি না? নিশ্চয়ই পারি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারি। এগুলো সময়মতো জানবেন।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার বলেছেন, তলেতলে সবার সঙ্গে আপস হয়ে গেছে। তাহলে কি ভিসা নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপস হয়েছে, সে প্রশ্ন করা হয়েছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। জবাবে তিনি বলেন, ‘উনি (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, ওনার কাছে জিজ্ঞেস করেন। ভিসা নীতি আমাদের জন্য গুরত্বপূর্ণ কিছু নয়। উনি (ওবায়দুল কাদের) ঠিকই বলেছেন।’


ভিসা নীতি নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করেন না দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘যারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য আবেদন করে, তাদের জন্য হয়তো দুসংবাদ, যদি দুষ্টলোক হয়। আমেরিকা তো সবাইকে ভিসা দেয় না। কয়েক হাজার লোক বছরে ভিসার জন্য আবেদন করে, এর মধ্যে কত লোককে ভিসা দেয়?’

বাংলাদেশেরও ভিসা নীতি আছে উল্লেখ করে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ভিসা নীতি সব দেশে আছে। আমাদের দেশেও আছে। আমরা সবাইকে ভিসা দিই না। আমরা ব্যক্তিবিশেষ কিংবা কোনো দেশকে কম ভিসা দিই। আমি যেটা বুঝতে পারি, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির মূল উদ্দেশ্য—যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। আমরাও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তারা আমাদের সঙ্গে একমত। তারা আমাদের হাতকে শক্ত করার জন্য ভিসা নীতি চায়।’

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে নিজের অভিমত তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা নির্বাচনে আসবে না, যুক্তরাষ্ট্র তাদের পক্ষে নেই। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষেই নেই। কিন্তু তারা বিশ্বাস করে, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র সুযোগ। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং গণতান্ত্রিক সরকার চায়। আমরাও গণতান্ত্রিক সরকার চাই।

সম্প্রতি ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থায় ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র আইসিউতে আছে।’ এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে  পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের ওপর উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এ রকম বহু লোক বহু প্রতিবেদন তৈরি করবে। আপনি (প্রশ্নকর্তা সাংবাদিককে উদ্দেশ করে) নিজে প্রতিবেদন তৈরি করেন। অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবেন না। আল্লাহর ওয়াস্তে এই বদভ্যাসটা বাদ দেন। অন্য কেউ কিছু বললে লাফাইয়া উঠবেন, এটা বাদ দিয়ে নিজে পরীক্ষা করে দেখেন কী অবস্থা। জনগণ যদি ভোট দেয় ওটাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।’

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। হোয়াইট হাউসের অন্য একজনের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে একমত। তারাও বলছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া উচিত। কিন্তু তারা মনে করে, মিয়ানমারে যদি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হয়, তাহলে জীবন-মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। এ জন্য আগে ওখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক, তারপরে এদের পাঠান।