বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ এখন সম্মুখসারির দেশ

আ ন ম মুনীরুজ্জামান

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তি ও চীনা বলয়ের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে কৌশলগত প্রতিযোগিতা চলছে। এই প্রতিযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এই বিষয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। আসলে বাংলাদেশে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর নীতি-কৌশলসংক্রান্ত যা ঘটছে, তা দুই বলয়ের প্রতিযোগিতার প্রতিফলন। বাংলাদেশ এখন এই প্রতিযোগিতার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

 ভৌগোলিক অবস্থান বা কৌশলগত কারণে বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে। বাংলাদেশ এখন সম্মুখসারির দেশে (ফ্রন্টলাইন স্টেট) পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিক্রিয়া কিংবা পদক্ষেপ এরই অংশ। ভবিষ্যতে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটা এখনই বলা মুশকিল।

ফলে বাংলাদেশকে নিয়ে আরও কী কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ, বাংলাদেশসংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া আমাদের একার ওপর নির্ভর করে না; বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিবর্তিত নানা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।

বৈশ্বিক শক্তির প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য ভারত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের নীতি-প্রতিক্রিয়া প্রকাশ্য হয়েছে। কিন্তু ভারত এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। মনে হচ্ছে তারা সময় নিয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২১ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। এমনটা হতে পারে নরেন্দ্র মোদি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠকের জন্য ভারত অপেক্ষা করছে। এরপর হয়তো প্রতিক্রিয়া আসতেও পারে, আবার না-ও আসতে পারে। আসলে কোনো কিছুই এখনো স্পষ্ট নয়।

বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বন্ধুরাষ্ট্রের অভিমত থাকে। তবে জাতীয় নির্বাচন মোটা দাগে অভ্যন্তরীণ বিষয় দিয়ে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেশের সব মানুষের প্রত্যাশা।

গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের ইচ্ছার সত্যিকারের প্রতিফলন দেশবাসীর প্রত্যাশা। এর সঙ্গে অন্য কারও বা বন্ধুরাষ্ট্রের মত মিলে গেলে তা বাড়তি পাওয়া। এটাকে খারাপভাবে দেখার কিছু নেই।

  • মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান: প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ।