স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনে সুপারিশ জমা দিল জাতীয় নাগরিক কমিটি
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন এবং স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের কাছে লিখিত সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নির্বাচন সরাসরি জনগণের ভোটে না করে ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে পরিষদের সদস্যদের নির্দিষ্ট মেয়াদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়াসহ ১৫ দফা লিখিত সুপারিশ করেছে তারা।
অন্যদিকে ‘ভঙ্গুর’ স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের কাছে ২৫ পাতার সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদের কাছে সুপারিশ জমা দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সম্পাদক আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, ক্রাইসিস রেসপন্স সেলের সম্পাদক আলী নাছের খান ও সহমুখপাত্র তাহসিন রিয়াজ। অন্যদিকে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রধান এ কে আজাদের কাছে সুপারিশ জমা দেন জাতীয় নাগরিক যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারা এবং স্বাস্থ্যনীতি ও অ্যাডভোকেসি সেলের সদস্যরা।
স্থানীয় সরকার কমিশনে যে সুপারিশ
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের কাছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ১৫ দফা সুপারিশ জমা দিয়েছে। এগুলো হলো:
১. স্থানীয় সরকারকে ‘স্থানীয় শাসন’ হিসেবে অভিহিত করা।
২. স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোতে এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার অবসান এবং কার্যকর জনসেবা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকারের স্তর হতে হবে তিনটি—ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ।
৩. স্থানীয় সরকারকে স্বশাসিত ও গণপ্রতিনিধিত্বশীল করে গড়ে তুলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু করা।
৪. সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদের সংস্কার।
৫. স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জনমানুষের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে তাঁদের প্রত্যাহার বা ‘রিকল’-এর ক্ষমতা জনমানুষের কাছে দেওয়া।
৬. স্থানীয় সরকারের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া।
৭. স্থানীয় সরকারকে পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেওয়া।
৮. স্থানীয় সরকারের সব সেবা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নীতির সঙ্গে সমন্বয় করে ‘ডিজিটাইজ’ করা।
৯. স্থানীয় সরকার প্রতিটি অঞ্চলে কর্মসংস্থানের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যেন কাজ করতে পারে এবং বিদেশি নিয়োগদাতাকে যাতে কর্মীর দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা।
১০. স্থানীয় সরকারের কোনো প্রতিনিধি সরকারি কর্মকর্তা বা অন্য কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধির কর্তৃত্বাধীন হবেন না।
১১. স্থানীয় সরকার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ রোধে নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত তারিখে সব স্তরে একই সঙ্গে নির্বাচন দেওয়া। নির্বাচনে কোনোভাবেই দলীয় পরিচয় ও দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করা।
১২. ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন না। ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে পরিষদের সদস্যরা নির্দিষ্ট মেয়াদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।
১৩. স্থানীয় সরকার পরিষদের সভায় নাগরিক প্রতিনিধি উপস্থিত থাকা ও মতপ্রকাশের আইনি বিধান রাখা।
১৪. এলাকার দরিদ্র ও ভুক্তভোগী মানুষের আর্থিক চাহিদা কমানোর কার্যকর ব্যবস্থা ও প্রতিনিধিদের সম্মানজনক ভাতার ব্যবস্থা করা।
১৫. সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মতো স্থানীয় সরকারেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্থায়ী কমিটি গঠন করা।
স্বাস্থ্য খাতের জন্য যেসব সুপারিশ
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের কাছে জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো হলো:
১. জরুরি স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ও আধুনিক অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা তৈরি করা।
২. রোগীদের সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে একটি কার্যকর রেফারেল সিস্টেম চালু করা।
৩. স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য উন্নত কর্মপরিবেশ ও ন্যায্য পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করা।
৪. সারা দেশে ডিজিটাল স্বাস্থ্যব্যবস্থা (ইএইচআর) চালু করা।
৫. সব চিকিৎসক যাতে চিকিৎসায় একটি নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন, তার জন্য প্রমাণভিত্তিক জাতীয় গাইডলাইন চালু করা।
৬. ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগসহ সংক্রামক রোগের গবেষণা সহজ করতে একটি জাতীয় বায়োব্যাংক স্থাপন।
৭. সরকারি উদ্যোগে নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যতথ্য প্ল্যাটফর্ম চালু করা।