‘আগে, বিরোধী দল হরতাল দিছে, এখন দেখি সরকারি দল হরতাল দেয়’

আসলাম শেখ পরিবারসহ ঢাকায় যাবেন। বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখছেন বাস বন্ধ। তাই, ফিরে যাচ্ছেন। আজ রংপুর নগরের কামারপাড়ায় ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের পথে পথে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের এক দিন আগে হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ায় দুর্ভোগ বলে সাধারণ জনগণের অভিযোগ। জেলা মোটর মালিক সমিতির ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের কারণে আন্তজেলা ও দূরপাল্লার সব ধরনের বাস, ট্রাক, পিকআপ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

আজ শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত রংপুর-ঢাকা মহাসড়ের মডার্ন মোড়, কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট মহাসড়কের মাহিগঞ্জ সাতমাথা, দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়-নীলফামারী মহাসড়কের মেডিকেল মোড়, নগরের কামারপাড়া ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কে কোনো যাত্রীবাহী বাস চলছে না। নেই ট্রাকও। কিছু অটোরিকশা চলাচল করছে। এরপরও মানুষ ঢাকায় যাওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে ছুটে এসেছেন, যদি কোনো বাস বা অন্য কোনো পরিবহন মেলে।

ঢাকা থেকে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার শরিফসুন্দর এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছেন আসলাম শেখ নামের এক ব্যক্তি। তিনি ঢাকায় ব্যবসা করেন কারওয়ান বাজারে। স্ত্রী, তিন সন্তানসহ পরিবারের সাতজন ঢাকায় যাওয়ার জন্য রংপুরের কামারপাড়া ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন। এসে দেখেন সব ধরনের বাস বন্ধ। ভ্যানের মধ্যে বসে আছেন স্ত্রী, সন্তানসহ অন্যরা। তিনি জানতেন না যে আজ সকাল ছয়টা থেকে পরিবহন ধর্মঘট।

কামারপাড়া ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আসলাম শেখের সঙ্গে কথা হলো। তিনি বলেন, ‘সকালবেলা একটি ভ্যানে করে আমরা সাতজন ঢাকায় যাওয়ার জন্য ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে বাস ধরতে আসি। আমরা জানতাম না যে গাড়ি বন্ধ। উপায় না পেয়ে আমাগো আবার বাড়ি ফিরি যাইতে হইব।’

পরিবহন ধর্মঘটের ফলে রংপুর থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। আজ রংপুর নগরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে
ছবি: প্রথম আলো

তিনি আরও বলেন, ‘জানতাম আগে, বিরোধী দল হরতাল দিছে, এখন দেখি সরকারি দল হরতাল দেয়, গাড়িঘোড়া বন্ধ করি দেয়।’

সকাল আটটায় নগরের ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের মডার্ন মোড় এলাকায় রংপুরের হারাগাছ এলাকার বাসিন্দা হামিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির দেখা মিলল। তিনি ফরিদপুর জুটমিলে চাকরি করেন। তিনি ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। অনেকের মতো তিনিও পরিবহন ধর্মঘটের খবর টেলিভিশনসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানার পরও ছুটে এসেছেন, যদি কোনো বাস বা ট্রাক পাওয়া যায়। সেখানেই চড়ে ঢাকায় যাবেন। তিনি ঘাড়ে একটি ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বলেন, ‘এইভাবে বাস বন্ধ করে সাধারণ জনগণকে কষ্টের মধ্যে ফেলার কি কোনো কারণ আছে? আমাকে চাকরিতে যোগদান করতেই হবে। তাই সকাল সকাল এসে বাস না পেয়ে অটোতে ভেঙে ভেঙে যদি বগুড়া পর্যন্ত যেতে পারি, তাহলে হয়তো ঢাকার বাস পাব। দেখা যাক ভাগ্যে কী আছে!’

মডার্ন মোড় এলাকায় আরও কথা হলো রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার ফিরোজ হোসেনের সঙ্গে। তিনি পাবনায় যাবেন। কিন্তু এসে দেখেন, কোনো গাড়ি নেই। বাস ধরতে এসে প্রথম জানতে পারেন রংপুর থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ। তিনি বলেন, ‘অটোতে যাব। সেই চিন্তা করছি। টাকা বেশি লাগবে। সময় এবং কষ্টও অনেক হবে। সেই কষ্টের কথা আর কেমন করি বলি বলেন!’

রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশ আগামীকাল শনিবার কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে। এই সমাবেশের আগে খুলনা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহের গণসমাবেশের পর একইভাবে সমাবেশের আগে পরিবহন মালিক সমিতির সংগঠন রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতি পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। আজ সকাল ছয়টা থেকে কাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে। ফলে সাধারণ মানুষদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে। পথে পথে যেন ভোগান্তির শেষ নেই।