সেলিনা আক্তারকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে শাহবাগে সমাবেশ
ফেসবুকে মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের জেরে চট্টগ্রাম বন্দর মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেলিনা আক্তারকে (শেলী) সাময়িক বরখাস্তের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে সমাবেশ হয়েছে। সেখানে সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, সেলিনা আক্তারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গায়ের জোরে তাঁর সঙ্গে অন্যায় আচরণ করছে।
‘মৌলবাদীদের ষড়যন্ত্র ও রোষানলের শিকার সেলিনা শেলীকে হয়রানির বিরুদ্ধে’ লেখা ব্যানারে আজ বুধবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশ হয়। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও গবেষক অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী বলেন, ১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর ইসলামী ছাত্রশিবির সেলিনা আক্তারের ওপর হামলা করে তাঁর মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। তিন মাস চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ জীবনে ফিরে আসেন। তবু তিনি তাঁর আদর্শ থেকে একচুল বিচ্যুত হননি। সেলিনা আক্তারকে চাকরিতে পুনর্বহাল এবং তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী।
সম্প্রতি ফেসবুকে পবিত্র রমজান মাসের আরবি উচ্চারণকে (রামাদান) কটাক্ষ করে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ তুলে সেলিনা আক্তারকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় বিভাগীয় মামলা হয়েছে। সেটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এক চিঠিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শরিফুজ্জামান (শরিফ) বলেন, ‘দেশে আমরা প্রতিনিয়িত নতুন নতুন উপদ্রব দেখছি। গত কয়েক বছরে এখানে নাগরিকদের জীবনে সবচেয়ে বড় উপদ্রবের নাম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এই আইন নাগরিকদের বাক্স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে, জনগণকে প্রতিনিয়ত ভয়ের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।’
সমাবেশে কবি ও শিক্ষক শাকিরা পারভীন বলেন, ‘আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সেলিনা শেলীর দীর্ঘ বিপ্লবী ও রাজনৈতিক জীবন রয়েছে। তিনি একজন মহান শিক্ষক ও কবি-প্রাবন্ধিক। ফেসবুক স্ট্যাটাসে একটি শব্দ ব্যবহারের জন্য তাঁকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়া তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না যদি শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানো জাতি হিসেবে আমরা নিজেদের না দেখতাম।’
কবি আফরোজা সোমা বলেন, ‘সেলিনা শেলী একেবারেই স্যাটায়ার করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এর বিপরীতে তাঁর ওপর একধরনের আক্রমণ ও হুমকি নেমে এসেছে। একজন লেখক হিসেবে আমার অনুরোধ থাকবে, যারা কর্তৃপক্ষ আছেন, তারা যেন মানুষের কণ্ঠ রোধ করার ব্যবস্থা না করেন।’
আদিবাসী ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ বলেন, সারা দেশে কবি, লেখক, সাংবাদিক এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে যাঁরাই কথা বলছেন, কালো আইন ব্যবহার করে সেই মানুষদের নিপীড়ন ও হয়রানি করা হচ্ছে। কণ্ঠরোধ, তাঁকে ভয় দেখানো এবং তিনি যাতে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পারেন, সে জন্য কবি সেলিনা শেলীকে কলেজ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেলিনা শেলীকে দেওয়া প্রতিহিংসামূলক শাস্তি প্রত্যাহার করে তাঁকে আগের জায়গায় বসার সুযোগ দিতে হবে।
প্রকাশক রবীন আহসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে কবি আলফ্রেড খোকন, কথাসাহিত্যিক মোজাফফর হোসেন, অ্যাকটিভিস্ট মুশফিকা লাইজু প্রমুখ বক্তব্য দেন।