বসন্ত এল বইমেলায়

অমর একুশে বইমেলা
ছবি: প্রথম আলো

‘মেলায় যাই রে...বাসন্তী রং শাড়ি পরে...’ গানটার কথা মনে আছে? একসময় মেলা হলেই খুব শোনা যেত। সময়ে কমেছে সে সুরের দাপট। আশি ও নব্বইয়ের দশকজুড়ে থাকা ব্যান্ডগুলোর নামও অনেকটা স্তিমিত। বাংলার রক মেটাল নামে বইয়ে সেসব কথা ধরে রাখতে চেষ্টা করেছেন মিলু আমান আর হক ফারুক। এ বইয়ে আছে বাংলাদেশের ১৮০টি ব্যান্ডের প্রোফাইল। গান শোনা না গেলেও ললনারা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে মেলায় আসেন এখনো।

গতকাল সোমবার মাঘের শেষ দিনের ধূসর বিকেল বইমেলায় রঙিন হয়েছে বাসন্তী রঙে। এমনই এক ললনা ভিন্ন ভাষায় বকছিলেন সঙ্গের পুরুষটিকে। তাঁর অপরাধ, মুঠোফোনে ঠিকঠাক ছবি তুলতে না পারা। কথোপকথন চলছিল ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুরের ভাষায়। রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে আসা নির্মলা দাস আর বিশান রায় বললেন, তাঁদের পূর্বপুরুষ দেশভাগের সময় এ দেশে এসেছেন। বাড়িতে এখনো কানপুরের ভাষার প্রচলন।

প্রচলনের প্রসঙ্গে এল প্রচ্ছদের কথা। প্রযুক্তির জন্য এখনকার অধিকাংশ বইয়ের একই রকম প্রচ্ছদ হচ্ছে। আর এটাই যেন প্রচলন হয়ে উঠেছে, এমন অভিযোগ মেলার মাঠের পাঠকদের। প্রচ্ছদশিল্পী চারু পিন্টু জানালেন, শিল্পীর নিজস্ব ধারা থাকে। কেউ ১০০টা প্রচ্ছদ করলে অনেকটা এক রকম মনে হবেই। তবে পাশাপাশি রেখে দেখলে বোঝা যাবে, আসলে ভিন্ন।

গতকালের মেলায় কিছুটা ভিন্ন অনুভব দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। কয়েকটি বই হাতে নিয়ে ছবি তুললেন। সবার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। মেলা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথম আলোকে বললেন, ‘মেলা ব্যাপারটাই সুন্দর। বই নিয়ে মাসব্যাপী এত বড় আয়োজন বিশ্বে খুব কমই হয়। বইয়ের মানের প্রসঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ। তবে এত বড় একটা মেলা হচ্ছে, সেটাই আগে উদ্‌যাপন করা প্রয়োজন।’

তবে মানের ব্যাপারটি উপেক্ষার উপায় নেই। গতকাল বিকেলে তা আবার প্রমাণ হয়েছে জাতীয় কপিরাইট অফিস কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে। ১২ থেকে ১৫টি স্টলকে সতর্ক করা হয়েছে। কপিরাইট ডেপুটি রেজিস্ট্রার প্রিয়াংকা দেবী পাল প্রথম আলোকে জানান, ‘বড় প্রকাশনীগুলোতে সমস্যা নেই। কিন্তু লিটল ম্যাগ চত্বর এবং ছোট কয়েকটি প্রকাশনার স্টলে অন্য প্রকাশনীর বই ও ফটোকপি বই ছিল। স্টলগুলোকে সতর্ক করার জন্য বইমেলার জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। শনিবারের মধ্যে সতর্ক না হলে স্টল বন্ধ করার সুপারিশ করা হবে।’ এর আগে গত সপ্তাহে একই অভিযোগে দুটি বইয়ের স্টল বন্ধ এবং সাতটিকে সতর্ক করা হয়।

বাংলা একাডেমির মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক, গবেষক মফিদুল হক।

ভালোবাসা দিবসের আগের দিন আনিসুল হকের লেখা প্রথমা প্রকাশনের পারিজাতের জন্য ভালোবাসা বইটি কিনেছেন অনেক পাঠক। কবিতার বইয়ের চাহিদাও গতকাল বেড়েছে। প্রথমার একই সারিতে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের প্যাভিলিয়নে দেখা গেল, সিদ্ধার্থ হকের কবিতার বই অন্ধকার খুলে দেখছেন ক্রেতা। একসঙ্গে ১১০টি কবিতা পেয়ে মন ভরল এক কবিতাপ্রেমীর। গতকাল নতুন বই এসেছে ১০৫টি। এর মধ্যে কবিতার বই ৪১টি।

১৪ ফেব্রুয়ারি পয়লা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসে মেলায় অনেক ভিড় হবে। এই ভিড় প্রত্যাশা বাড়ায় প্রকাশকদের। তবে ধুলাও কম উড়বে না। মঙ্গলবারের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা আছে কি না, জানতে যোগাযোগ করা হয় বাংলা একাডেমির মেলা পরিচালনা কমিটির সঙ্গে। সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বললেন, রাতেই পানি দেওয়া হবে মাঠে। দিনের বেলায় সম্ভব নয়, পানি দিতে হয় একাডেমির মূল পাম্প থেকে পাইপ দিয়ে এনে। মাঘের শেষ টানে গতকাল রাতেই খানিকটা ধুলা উড়ে গেল মেলার মাঠের বাতাসে। কেউ কেউ ঘন হয়ে দাঁড়ালেন সঙ্গীর সঙ্গে। হাতে থাকা বইয়ের ব্যাগ সামলে নিতে নিতে বললেন, মাঘের শেষ হাওয়া।