গাজা-পশ্চিম তীরে কেমন ছিলেন, জানালেন বাংলাদেশে পড়ুয়া ২ ফিলিস্তিনি তরুণ
অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনে দখলদারি চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের অর্ধেকের বেশি এলাকা দখল করে নিয়েছে তারা। বিভিন্ন যুদ্ধে ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ, শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। এসব যুদ্ধের সাক্ষী পুরো বিশ্ব। কোনো কোনো দেশ নীরব থেকেছে, কেউ আবার সরব হয়েছে, যেমন বাংলাদেশ।
কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশে পড়ুয়া ফিলিস্তিনি দুই তরুণ ইব্রাহিম কিসকো (২৩) ও আইজ্যাক এন নমুরা (২৩)। আজ রোববার বিকেলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে অধ্যয়নরত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর দৃষ্টিতে ফিলিস্তিনের সংগ্রাম অনুধাবন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তাঁরা। আইজ্যাকের বাড়ি দখলকৃত পশ্চিম তীরের হেবরনে। আর ইব্রাহিমের বাড়ি গাজায়।
ইব্রাহিম কিসকো ও আইজ্যাক এন নমুরা—দুজনই বাংলাদেশে চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করছেন। আইজ্যাক পড়ছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে আর ইব্রাহিম ঢাকা মেডিকেল কলেজে। তাঁরা দুজনেই চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ২০২১ সালে বৃত্তি পেয়ে তাঁরা বাংলাদেশে পড়তে আসেন। বাংলাদেশে এসে একে অপরকে চিনেছেন।
আলোচনা সভায় আইজ্যাক বলেন, ‘২০২১ সালে আমি যখন বাংলাদেশে আসি, তখন পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রায় ১০০ তল্লাশিচৌকি ছিল। সেখান থেকে শিশু, নারী, পুরুষদের হেনস্তা করত এবং তাঁদের ওপর নির্যাতন চালাত ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের ইচ্ছেমতো আমাদের ধরে কারাবন্দী করে রাখা হতো।’
ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনের অসংখ্য শিশু, নারী, পুরুষকে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে—অভিযোগ এনে আইজ্যাক বলেন, ‘কারাগারে আমার ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের বন্দী করে রাখা হয়েছে। তারা সেখানে অনাহারে দিন পার করছে। প্রতিনিয়ত নারীদের ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হচ্ছে। এসব থেকে মুক্তি চাই। ইনশা আল্লাহ, একদিন মুক্ত হব।’
আলোচনা সভার আগে আইজ্যাক এন নমুরার সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি জানান, ছেলেবেলায় মহাকাশচারী হতে চেয়েছিলেন। তাঁর পরিবারে ছয় ভাই ও পাঁচ বোন রয়েছে। তিনিই একমাত্র ফিলিস্তিন থেকে দূরে। তাঁর প্রিয় খাবার ‘মাকলুবা’ (বিরিয়ানির মতো একধরনের খাবার)। বাংলাদেশের তেহারি খেতে খুবই পছন্দ করেন। মিষ্টান্নের মধ্যে প্রিয় রসমালাই। পুরান ঢাকা ঘুরতে এবং পুরান ঢাকার খাবার খেতে ভালো লাগে তাঁর।
আইজ্যাক প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে পড়াশোনা করতে পেরে তিনি গর্ব বোধ করেন। বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়েছে। এটা তাঁর কাছে আশ্চর্য হওয়ার মতো কোনো ঘটনা নয়। কেননা ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের এই সংহতি অনেক আগে থেকেই।
আলোচনা সভায় ফিলিস্তিনের আরেক তরুণ ইব্রাহিম কিসকো বলেন, ‘যত দূর মনে পড়ে, আমি তিন থেকে চারটি সরাসরি খণ্ডযুদ্ধ দেখেছি। যুদ্ধগুলো ২০০৮, ২০১২, ২০১৪, ২০২১ সালে হয়েছিল। প্রতিটি ঘটনায় ইসরায়েলি বাহিনী আমাদের অসংখ্য মা, ভাই, বোনকে হত্যা করেছে। ফিলিস্তিন আমাদের জন্মভূমি হওয়া সত্ত্বেও তারা আমাদের ঘরের বাইরে যেতে দিত না। আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা করতে দিত না। এই অসহনীয় যুদ্ধের সাক্ষী পুরো বিশ্ব। তাদের কেউ কেউ নীরব থেকেছে। কেউ কেউ সরব হয়ে আমাদের পক্ষে নেমেছে। যেমন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’
ইব্রাহিম কিসকো বলেন, ‘আমরা আমাদের ভূমিতে ফিরে যেতে চাই। শুধু গাজা নয়, ফিলিস্তিনের পুরো অংশ ঘুরে দেখতে চাই। সেখানে প্রতিটি শিশু সুন্দরভাবে বেড়ে উঠবে, সেটা দেখতে চাই। আমরা মানুষ হিসেবে আমাদের মানবিক অধিকারগুলো ফেরত চাই।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব জাহিদ আহসান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখপাত্র রাফিয়া রেহনুমা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব মো. আবদুল্লা ইবনে জুবায়ের।