রাজশাহীতে মানববন্ধন থেকে বিএনপির ১২ নেতা-কর্মীকে আটক

রাজশাহীতে বিএনপির আয়োজনে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার নেতা-কর্মী ও নাগরিকদের পরিবারের স্বজনেরা। রোববার দুপুরে নগরের রানীবাজার বাটার মোড় এলাকায়ছবি: শহীদুল ইসলাম

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে বিএনপির আয়োজিত মানববন্ধন শেষে ১২ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী নগরের বাটার মোড় থেকে তাঁদের আটক করা হয় বলে জানান কেন্দ্রীয় বিএনপির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ও রাজশাহী সিটির সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. জামিরুল ইসলাম বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, নাশকতা মামলা আছে, তাঁদের আটক করা হয়েছে। তবে কোন থানার পুলিশ, কাকে বা কতজনকে গ্রেপ্তার করেছে, তা তিনি জানাতে পারেননি।

বিএনপি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটক ব্যক্তিরা হলেন রাজশাহী নগরের কেদুর মোড় এলাকার আনারুল ইসলাম (৪৫), বাগমারা উপজেলার হাসানুজ্জামান (৩২), নগরের হেতেম খাঁ এলাকার জাকারিয়া হোসেন ওরফে নয়ন (৪০), আলমগীর হোসেন (৪৩), মো. সুজন (৩৪), মো. মশিউর রহমান (৪৪), গোদাগাড়ীর কাঁকনহাটের সুন্দরপুর গ্রামের মো. হাবিবুর রহমান (৩৭), নগরের লক্ষ্মীপুর এলাকার শাহানুর ইসলাম ওরফে মিঠু (৫৫), বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরের চাকিরপাড়া এলাকার রমজান আলী (৪৪), দুর্গাপুর উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার আল মারুফ জাহান (৩৬), নগরের বুধপাড়া এলাকার নাজমুল হক ওরফে ডিকেন (৪৫), দুর্গাপুর উপজেলার আহমেদ রেজাউল হক (৫০)। তাঁদের মধ্যে নাজমুল হক বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও শাহানুর ইসলাম রাজপাড়া থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি।

তাঁদের আটকের পর বিএনপির নেতা মোসাদ্দেক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কিসের মানবাধিকার, কিসের আন্তর্জাতিক অধিকার। বাংলাদেশের মানুষের পয়সায় যারা কর্মচারী, তারা কীভাবে এই আচরণ করে? আজকের দিনে তারা (পুলিশ) যে আচরণ করল, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আটক নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে ছেড়ে দিতে হবে। তা না হলে তিনি ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু থানায় গিয়ে বসবেন বলে জানান।

কেউ ছেলে ও কেউ স্বামীর মুক্তি চাইল

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ বেলা ১১টার দিকে নগরের বাটার মোড়ে রাজশাহী মহানগর ও জেলা বিএনপির আয়োজনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। মানববন্ধনে আসা গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনদের অনেকেই প্রিয়জনের কারাগারে দুর্বিষহ সময় কাটানোর বর্ণনা দেন। কীভাবে, কখন তাঁদের তুলে নেওয়া হয় সেই বর্ণনা অনেকেই কান্নাভেজা কণ্ঠে বলতে থাকেন। কারও স্বামী, কারও দাদা, কারও ছেলে, কারও চাচা কারাগারে। তাঁরা জানতে চান, কিসের ভিত্তিতে তাঁদের এই কারাবাস।

তাঁদের বক্তব্য শেষে রাজশাহী জেলা ও মহানগরের নেতা, আইনজীবী নেতা, বিএনপির কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতারা বক্তব্য দেন।

কাজলী বেগম বাঘা উপজেলার কাছারিপাড়া গ্রাম থেকে সকালে রাজশাহীতে এসেছেন। তাঁর ছেলে মো. বাঁধনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ মাস ৩ দিন আগে। তিনি আব্দুলপুর কলেজে স্নাতকে পড়ছেন। তাঁর বাবা রজব আলী কৃষিকাজ করেন। কাজলী বেগমে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার সন্তানকে ধরে নিয়ে গেছে। আমরা কৃষি কাম করে খাই। আমাদের চলার কোনো পরিস্থিতি নাই। আমরা খুব দরিদ্র। আমরা কষ্ট করে ছেলেকে পড়ালেখা শিখাই। আমার স্বামী প্রতিবন্ধী। আমার ছাওয়ালের (ছেলে) খুব কষ্ট হচ্ছে। সে একটা পরীক্ষা দিতে পারে নাই। আমার ছাওয়ালকে ছেড়ে দাও।’

বৃষ্টি আক্তার কয়েক মাসের ছেলেসন্তানকে নিয়ে কান্না করে বলেন, তাঁর স্বামী অন্যের অটোরিকশা চালিয়ে আয়রোজগার করেন। এক মাস আগে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন কারাগারে খুব কষ্টে আছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে অসুস্থ। সংসার চলছে না। খেয়ে না খেয়ে আছি। আমার স্বামীর মুক্তি চাই।’

আরেক সন্তানের মা বলেন, ‘আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। আমি কান্না করে বলব না। পুলিশের দয়ামায়া নাই। কান্না করতে হলে আল্লাহর কাছে কাঁদব। তারা কি ডাকাতি করেছে? চুরি করেছে? কী অপরাধ করেছে যে ধরে নিয়ে যেতে হবে? ছেলের মুক্তি চাই। শুধু আমার ছেলের না, সবার স্বামী, ছেলেসহ সবার মুক্তি চাই।’