টিভি দেখবেন কত দূর থেকে

খুব কাছে থেকে টিভি দেখা নয়—শৈশব থেকেই এ নিষেধাজ্ঞায় বড় হওয়া। ছোটকালে যা করা যায় না, তা বড় হয়ে করা যায়—এমন অনেক কিছু থাকলেও টিভি দেখার সময় এই নিষেধাজ্ঞা আজীবনের। বয়স বাড়লেই উঠে যাবে না নিষেধাজ্ঞা। কারণ, একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে টিভি না দেখলে পড়তে হয় নানান সমস্যায়।

খুব কাছে থেকে টিভি দেখলে কী কী সমস্যায় পড়তে হয়, কত দূরত্ব থেকে টিভি দেখব, কিংবা প্রবীণরা টিভি দেখার ক্ষেত্রে এখনো কী কী বিধিনিষেধের মধ্যে দিয়ে যাবেন—তা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. যাকিয়া সুলতানা।

টিভি কত দূর থেকে দেখব? এ প্রশ্নের সহজ সমাধান দেওয়া যায় যে স্বাভাবিকভাবে যতটুকু দূরত্ব থেকে দেখলে আমাদের চোখে ও শরীরে কোনো অস্বস্তি তৈরি হবে না—সেটিই হলো ন্যূনতম দূরত্ব। এই ন্যূনতম দূরত্বের কথা ভেবেই টেলিভিশন কেনা উচিত এবং যে ঘরে এটি রাখা হবে, সেটিও বিবেচনা করা প্রয়োজন। খুব কাছে থেকে দেখার কারণে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেগুলো দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়। নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে টিভি না দেখলে চোখ জ্বালা করা, ঝাপসা দেখা, চোখ দিয়ে পানি পড়া বা খুব শুকিয়ে যাওয়া অনুভব, উজ্জ্বল আলোতে অস্বস্তি বোধ করা, ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথা হওয়া, চোখ ও মাথাব্যথা ইত্যাদি নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

মানুষ তার সামনের ১৩৫ ডিগ্রি পরিমাণ অংশ দেখতে পারে। আর টিভির মধ্যে সম্পূর্ণ অংশেই তার দৃষ্টি থাকে, ফলে সেটি মস্তিষ্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। সোসাইটি অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন ইঞ্জিনিয়ার্সের পরামর্শ হলো, টেলিভিশন এমন একটি দূরত্ব থেকে দেখা উচিত, যেন তা দৃশ্যমান অংশের বা ফিল্ড অব ভিউ ৩০ ডিগ্রি থেকে সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি দখল করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ৪০-৪৫ ইঞ্চি মডেলের টেলিভিশনগুলো সাড়ে ৫ থেকে ৬ ফুট দূরত্ব থেকে দেখা উচিত এবং কোনোভাবেই ৪ ফুটের বেশি কাছে থেকে দেখা উচিত নয়। ফুল এইচডি বা ফোরকে রেজল্যুশনের টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এই ফিল্ড অব ভিউ আরও বেশি হতে পারে। অর্থাৎ, আরও কাছ থেকে দেখলেও অস্বাভাবিক বোধ হয় না। পিক্সেল ডেনসিডি বেশি হওয়ার কারণে এই অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যায়।

একটি বাড়িতে টেলিভিশনের দিনভর দর্শক বলতে আমরা ছোটদেরই বুঝি। অনেক ক্ষেত্রেই স্কুলছুটির পর বা অবসরে টিভির সামনেই হয়ে ওঠে তাদের স্থায়ী অবস্থান। আর এখন শিশুদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের শিক্ষা ও বিনোদনমূলক আয়োজন। চারদেয়ালে বন্দী শিশুর কাছে টিভিই অনেক সময় ‘যন্ত্রবন্ধু’ হয়ে যায়। এই যন্ত্রবন্ধু যেন তাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুকে নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে বসে টিভি দেখার অভ্যাস করাতে হবে। বসার সময় সে যেন ঘাড় গুঁজো বা বেকায়দায় না বসে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুর টিভি দেখার ক্ষেত্রে সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে দিনে এক থেকে দুই ঘণ্টা, এর বেশি নয়।

প্রাপ্তবয়স্করা সারা দিন কর্মব্যস্ত থাকেন ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে। বাসায় ফিরে যখন তাঁরা টিভি দেখতে বসেন, তখন সাধারণত খুব মন দিয়ে খেলা বা সিনেমা দেখার ক্ষেত্রে চোখের পলক পড়ার হার কমে যায়। তাতে চোখ শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। টিভি দেখার সময় এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে অ্যান্টিগ্লেয়ারজাতীয় কোনো চশমা পরে নিতে পারেন।