হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালের ভেতরে অ্যাম্বুলেন্স রেখে ব্যবসা করতে না দেওয়ায় আজ রোববার ভোর ছয়টা থেকে জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে হবিগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এ পরিবহন ধর্মঘটে জেলার সঙ্গে ঢাকা, সিলেটসহ সারা দেশের পরিবহন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
হঠাৎ করে এ ধর্মঘট ডাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন বলছে, এ ধর্মঘটের বিষয়ে তারা জেলা প্রশাসনকে আগে থেকে লিখিতভাবে জানিয়েছে।
ওই হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে অ্যাম্বুলেন্স রেখে ব্যবসা করছে জেলা অ্যাম্বুলেন্স সমিতি। হাসপাতালের ভেতরে শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স রেখে ব্যবসা করায় এ হাসপাতালে আসা রোগীরা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব অ্যাম্বুলেন্সের চালক হাসপাতালে কোনো রোগী এলে তাঁকে অন্যত্র নিয়ে যেতে টানাহেঁচড়া করেন। এ নিয়ে প্রায় সময় রোগীর লোকজনের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের চালকদের ঝগড়া হয়। নানা ভোগান্তি ও জটিলতায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৭ মার্চ অভিযান চালিয়ে সব অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেয়।
এর প্রতিবাদে ৯ মার্চ থেকে হবিগঞ্জ অ্যাম্বুলেন্স সমিতি তাদের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বন্ধ রাখে। হবিগঞ্জ জেলা অ্যাম্বুলেন্স সমিতি হবিগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত সংগঠন। তারা এ ঘটনার প্রতিবাদে ১২ মার্চ জরুরি সভা ডাকে। সভায় অ্যাম্বুলেন্স সমিতির সদস্যরা হাসপাতালের ভেতরে অ্যাম্বুলেন্স রেখে ব্যবসা করতে মত দেন। সভা শেষে হবিগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন ওই দিন জেলা প্রশাসনকে একটি স্মারকলিপি দেয়।
স্মারকলিপিতে শ্রমিক ইউনিয়নকে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালের ভেতরে অ্যাম্বুলেন্স রাখার অনুমোদন, এ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল ইসলাম সরকারকে প্রত্যাহার, পুলিশ দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের চালকদের হয়রানি বন্ধ করা, হাসপাতাল পরিচালনা কমিটি ও জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে জেলা শ্রমিক ইউনিয়নকে অন্তর্ভুক্ত করাসহ ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে ১২ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত চার দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। এ সময়সীমার মধ্যে তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় গতকাল শনিবার রাতে জরুরি সভা ডেকে হবিগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন আজ ভোর থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। এ পরিবহন ধর্মঘটে হবিগঞ্জের সঙ্গে ঢাকা, সিলেটসহ সারা দেশের পরিবহন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
হঠাৎ করে এ পরিবহন ধর্মঘট ডাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। আজ সকালে হবিগঞ্জ পৌর বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, এ বাসস্ট্যান্ড থেকে চলা ঢাকা-সিলেটসহ উপজেলার সব পরিবহন বন্ধ রয়েছে।
ঢাকা যেতে এসেছিলেন মোহাম্মদ আলী (৫০) নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, সকাল আটটায় এসে তিনি জানতে পারেন এ ধর্মঘটের কথা। এখন ঢাকায় যাওয়া তাঁর খুবই জরুরি। কিন্তু কিভাবে যাবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না।
সিলেটের একটি হাসপাতালে ক্যানসার রোগের কেমো দেওয়ার জন্য আজ নির্ধারিত তারিখ ছিল বিনা পাল (৬৫) নামের এক নারীর। তিনি স্বামীকে নিয়ে সিলেট যেতে পারছেন না। তিনি বলেন, বলা নেই, কথা নেই এ ধরনের ধর্মঘট ডাকায় বিপাকে পড়েছেন তিনি।
হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির রফিকুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের এ ধর্মঘট অযৌক্তিক। তাঁরা পান থেকে চুন খসতেই যেকোনো সময় ধর্মঘট ডেকে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেন। তাঁদের অধিকার নেই এ ধরনের জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার।
হবিগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সজিব আলী বলেন, ‘আমরা হঠাৎ করে ধর্মঘটের ডাক দিইনি। জেলা প্রশাসনকে বিকল্প জায়গায় (হাসপাতালের সামনে) অ্যাম্বুলেন্স রাখার স্থান নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিই। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা না করায় আমরা বাধ্য হয়ে এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের ৯ দফা দাবি তুলে ধরেছি জেলা প্রশাসনের কাছে। এ দাবিগুলো পূরণ করা লাগবে।’
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, শ্রমিকদের কেন এ ধর্মঘট, তা প্রশাসনের কাছে স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে তাঁরা কথা বলবেন শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে।