ভালো রাজনৈতিক দল ছাড়া উন্নত রাষ্ট্র গঠন করা যাবে না: অধ্যাপক আবুল কাসেম
উন্নতির দিকে যেতে হলে ভালো রাজনৈতিক দল দরকার। ভালো রাজনৈতিক দল ছাড়া উন্নত রাষ্ট্র গঠন করা যাবে না। তবে রাজনীতি রাজনীতিকদের আয়ত্তে নেই। তাদের আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে। জাতীয় রাজনীতির এই দুর্বল অবস্থা কাটিয়ে উঠতে হবে। যুক্তি-বিবেচনা দিয়ে বিচার করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ‘২৪–এর গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র ও জাতীয় ঐক্য’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট রাষ্ট্রচিন্তক, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক এ কথাগুলো বলেন। সভার আয়োজন করে রাষ্ট্রভাবনা ও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে যে আলোচনা চলছে, সেখানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে। এ জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন। বিচারব্যবস্থার ওপরে জনসাধারণ আস্থা হারিয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের সময়েই চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক চরিত্র পরিবর্তিত হয়েছিল। শেখ হাসিনার সরকার বাক্স্বাধীনতা হরণসহ অসংখ্য হয়রানিমূলক মামলা, গুম, খুনের মতো সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতা করেছে। এসবের বিচার হওয়া প্রয়োজন।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের তিন দিকে ভারতের সীমান্ত। তাই পারস্পরিক ভালো সম্পর্ক থাকা দুই দেশের জন্যই কল্যাণকর। ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা দিয়েছে। সে জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞতা মানে ঋণ স্বীকার করা, চিরকাল অনুগত থাকা নয়, এই বিষয়টি সবারই বুঝতে হবে।’
আলোচনায় প্রধান বক্তা রাষ্ট্রভাবনা ও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ-এর প্রধান সমন্বয়ক গোলাম সারোয়ার মিলন লিখিত বক্তব্যে বলেন, এই গণ-অভ্যুত্থানের মর্মবাণী হলো নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়ে তোলা। এ জন্য জাতীয় ঐকমত্য অপরিহার্য। ছাত্রসহ ছোট–বড় সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ওপর ভিত্তি করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করতে হবে। এটা এমনভাবে করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে আর কোনো স্বৈরশাসক তৈরির পথ না থাকে।
অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। তবে তাদের সব সুপারিশ গ্রহণ করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সুপারিশের সংগতি থাকতে হবে।
সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ মাস অতিক্রান্ত হলো। সাইবার সিকিউরিটি আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ অনেক নিবর্তনমূলক আইন তারা অধ্যাদেশ জারি করেই বাতিল করতে পারত। এমন অনেক গণদাবি ছিল যা বাস্তবায়নের জন্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশের প্রয়োজনীয়তা নেই। সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের দ্রুত করে ফেলা উচিত।
সাংবাদিক শওকত মাহমুদ বলেন, এই সরকারের একটি আইনি আচ্ছাদনের জন্য অভ্যুত্থানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র থাকা দরকার। ছাত্র এবং সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যের ভিত্তিতে এই ঘোষণাপত্র তৈরি করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে সংস্কারসহ অন্যান্য কার্যক্রম আইনগতভাবে গ্রাহ্য হতে পারে। একই সঙ্গে তিনি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।
সভার সভাপতি সংগঠনের আহ্বায়ক মো.আসাদুজ্জামান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের জন্য একটি বৃহত্তর সংহতি গড়ে তুলতে হবে, যেন বিষয়টিতে সবাই একমত হতে পারে।
আলোচনায় আরও অংশ নেন আইনজীবী এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান, অধ্যক্ষ রেজাউল করিম, জাতীয় পর্যবেক্ষণ পরিষদের সভাপতি রেহেনা সালাম প্রমুখ।