ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগ: নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগ ২৮ শিক্ষার্থীর, শিক্ষক জানালেন আক্ষেপ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগ করেছেন একটি ব্যাচের ২৮ শিক্ষার্থী। তাঁরা এ বিষয়ে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অবশ্য অভিযোগগুলো সঠিক নয় দাবি করে নাদির জুনাইদ প্রথম আলোকে বলেন, নম্বর কম পাওয়ার জন্য তাঁকে দায়ী করাটা দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। তিনি এককভাবে শিক্ষার্থীদের নম্বর নির্ধারণ করেননি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, অভিযোগকারীরা বিষয়টি নিয়ে তাঁর কাছে কিছু বলেননি।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১২তম ব্যাচের (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয় গতকাল মঙ্গলবার। পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৫৪ জন।

আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ২৮ শিক্ষার্থী। তাঁদের অভিযোগ, ১০০ নম্বরের সমন্বিত কোর্সে তাঁরা ৫৪ জনের মধ্যে ৩৫ জন সিজিপিএ ৩–এর কম পেয়েছেন (৪–এর মধ্যে)। স্নাতক পর্যায়ের ফলাফলে যাঁরা ভালো করেছিলেন, তাঁরাও এই কোর্সে খুব একটা ভালো করতে পারেননি।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ব্যাচটির স্নাতকোত্তর পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও সমন্বিত কোর্সের (এমসিজে-৫২৭) প্রথম পরীক্ষক ছিলেন নাদির জুনাইদ। এই কোর্সের মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে নাদির জুনাইদ ছিলেন।

অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরা মৌখিক পরীক্ষায় অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে পরীক্ষার্থীদের ভীতসন্ত্রস্ত করে ফেলা, ফল প্রকাশের আগেই আরেক ব্যাচের ক্লাসে তা নিয়ে মন্তব্য করা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া দেখে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিজের আচরণ নির্ধারণের অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগকারীরা উপাচার্যের কাছে তিনটি দাবি জানিয়েছেন—সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করে মৌখিক পরীক্ষা আবার নেওয়া ও সম্পূর্ণ ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন; অধ্যাপক নাদির জুনাইদের শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং শিক্ষক মূল্যায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় যে যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা দ্রুত চালু করা।

উপাচার্য অভিযোগটি সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) সীতেশ চন্দ্র বাছারের কাছে পাঠিয়েছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।

এদিকে অধ্যাপক নাদির জুনাইদ নম্বর কম পাওয়ার জন্য তাঁকে দায়ী করাকে দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন। অভিযোগগুলো সঠিক নয় বলে দাবি করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে চারজন সদস্য ছিলেন। চারজনই নম্বর দেন। সেটির গড় হয়। ফলে এককভাবে কারও নম্বর কমিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।

সমন্বিত কোর্সের লিখিত অংশের খাতা দুজন পরীক্ষক দেখেন। দুজনের নম্বরের পার্থক্য ১০-এর বেশি হলে খাতা চলে যায় তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে। বিষয়টি জানিয়ে অধ্যাপক নাদির জুনাইদ বলেন, ‘আমি নম্বর কম দিইনি। বরং ওই অংশে অন্য পরীক্ষকদের চেয়ে আমিই বেশি নম্বর দিয়েছি। যেহেতু আমি ট্যাবুলেটর (নিরীক্ষক) ছিলাম, তাই আমি অন্যদের দেওয়া নম্বর দেখার সুযোগ পেয়েছি।’

অধ্যাপক নাদির জুনাইদ আক্ষেপ করে বললেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমার কাছে আসতে পারত। কিন্তু তাঁরা আমার কাছে আসেনি। কেউ আমার সঙ্গে কথাও বলেনি। আমাকে বলে সমাধান না পেলে তাঁরা অন্য কাউকে বলতে পারত।’