মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়সসীমা নির্ধারণ অবৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধে আপিল শুনবেন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ
মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়সসীমা নির্ধারণ করে জারি করা পৃথক গেজেট–পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনবেন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি আগামী ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আপিল বিভাগ। শুনানি নিয়ে আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ ওই সময় পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
পৃথক পরিপত্র ও গেজেটের মাধ্যমে ১৩ বছর এবং পরে সাড়ে ১২ বছর মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়সসীমা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে সম্মানী ভাতা নিয়ে জটিলতায় মুক্তিযোদ্ধাদের করা পৃথক ১৫টি রিটের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ১৯ মে হাইকোর্ট ওই রায় দেন। এ–সংক্রান্ত রায়ের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল পৃথক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। এই লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি আদেশ দেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়।
এর ধারাবাহিকতায় গত বছর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। আপিলের ওপর ৪ মে শুনানি শুরু হয়। আগের ধারাবাহিকতায় আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের আজকের কার্যতালিকায় ২ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানিতে অংশ নেন, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর সাদাত শুনানিতে অংশ নেন। রিট আবেদনকারীপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক বিষয় এসেছে। পাশাপাশি সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। যে কারণে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ (আপিল বিভাগের সব বিচারপতি) শুনবেন বলেছেন আপিল বিভাগ। আগামী ২৯ অক্টোবর আপিল শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। সেদিন শুনানির জন্য আপিলটি কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে।’
রিট আবেদনকারীপক্ষের তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সালের জুনে এক সার্কুলারে মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়সসীমা ১৩ বছর নির্ধারণ করা হয়। ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর ‘মুক্তিযোদ্ধা এর সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ’ করে গেজেট করা হয়। এতে বলা হয়, ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে ন্যূনতম ১৩ বছর হতে হবে। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি এটি সংশোধন করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১২ বছর ৬ মাস। এসবের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে মুক্তিযোদ্ধারা হাইকোর্টে পৃথক রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বিভিন্ন সময়ে রুল দেন। রুলের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ১৯ মে হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স নির্ধারণে সরকারকে সীমিত ক্ষমতা দেওয়া–সংক্রান্ত ২০১৮ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইনের ২(১১) বিধানে অংশবিশেষ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হয়। রিট আবেদনকারীদের বন্ধ করা সম্মানী ভাতাদি চালু করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।