চট্টগ্রাম-১০ আসনে নৌকার বিপক্ষে এবার মনজুর 

রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে প্রায় আট বছর পর আবার নির্বাচনী মাঠে ফিরেছেন মনজুর আলম।

মো. মহিউদ্দিন ও মোহাম্মদ মনজুর আলম

প্রায় ছয় মাস আগে উপনির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-পাহাড়তলী-খুলশী) আসনে কার্যত ‘খালি মাঠে’ জয়ী হয়েছিলেন নৌকার প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন। ভোট পড়েছে ১২ শতাংশের কম। এবার তা হচ্ছে না। স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। ভোটাররা মনজুরকে মনে করছেন নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। 

তবে নির্বাচন নিয়ে ভোটাররা দোটানায়— ভোটকেন্দ্রে যাবেন কি যাবেন না, এই দোলাচলের মধ্যে আছেন। কেউ বলেছেন, নির্বাচনের দিন সিদ্ধান্ত নেবেন। কারও ভাষ্য, কে জিতল তা নিয়ে আগ্রহ নেই। তবে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা প্রার্থীরা।

রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে প্রায় আট বছর পর আবার নির্বাচনী মাঠে ফিরেছেন মনজুর আলম। কোনো দলেই তিনি এখন নেই। পেয়েছেন ফুলকপি প্রতীক। দলীয় সমর্থন না পেয়ে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন মহানগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ। ভোটের মাঠে এই তিনজনের প্রচারণাই বেশি চোখে পড়েছে।

নৌকার প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন ছিলেন প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার পর ছয় মাস সময় পেয়েছেন তিনি। নির্বাচনে দলীয় লোকজনের সমর্থন পাচ্ছেন তিনি।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি না আসায় পুরোপুরি জমবে না নির্বাচন। কারণ, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও ঘুরেফিরে আওয়ামী লীগের। এরপরও নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুরের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করেন ভোটাররা। 

সিটি করপোরেশনের ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫, ২৬—এই আটটি ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম-১০ আসন। এই আসনে ভোটার ৪ লাখ ৮৫ হাজার। এবার লড়ছেন ১০ জন প্রার্থী। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন নৌকা প্রতীকের আফছারুল আমীন। পরের দুটি সংসদ নির্বাচনেও তিনি জয়ী হয়েছিলেন। আফছারুল আমীন মারা যাওয়ার পর এই আসনে ছয় মাস আগে উপনির্বাচনে জয়ী হন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন। 

২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। ‘রাজনৈতিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেছিলেন তিনি।

কেন আলোচনায় মনজুর-মহিউদ্দিন

নৌকার প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন ছিলেন প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার পর ছয় মাস সময় পেয়েছেন তিনি। নির্বাচনে দলীয় লোকজনের সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। প্রচারণায় ওয়ার্ডভিত্তিক দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা খাটছেন তাঁর জন্য। নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সমর্থন পাচ্ছেন তিনি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলম ১৯৯৪ সাল থেকে ১৭ বছর এই আসনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। ‘রাজনৈতিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। পরে ২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে আবার লড়েন আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে। সেবার নির্বাচনের দিন বিএনপি ভোট বর্জন করার পর রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দেন মনজুর। রাজনীতি ছাড়লেও সামাজিক নানা কাজে যুক্ত থাকায় তাঁর ক্ষেত্রে ব্যক্তি ‘ইমেজ’ কাজ করবে বলে মনে করেন ভোটাররা।

প্রচারণায় সরগরম, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

গত শনি, রবি ও গতকাল সোমবার হালিশহর, মধ্যম রামপুরা, মনছুরাবাদ, দেওয়ানহাট, চৌমুহনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অলিগলি ও মূল সড়কের পাশে প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলমের পোস্টার-ব্যানার বেশি চোখে পড়েছে। এরপরে আছে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদের কেটলি প্রতীকের পোস্টার-ব্যানার। 

প্রচারণায় দুই প্রার্থী মহিউদ্দিন ও মনজুরের সমর্থকেরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। সরেজমিনে লালখান বাজার এলাকায় দেখা যায়, সড়ক দখল করে নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছে নৌকার প্রার্থীর। সড়ক ও নালার ওপর ক্যাম্প করায় চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। অন্যদিকে দুই নম্বর গেট এলাকায় সড়কের ওপর করা হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুরের প্রতীক ফুলকপির ক্যাম্প। 

গত শনি, রবি ও গতকাল সোমবার হালিশহর, মধ্যম রামপুরা, মনছুরাবাদ, দেওয়ানহাট, চৌমুহনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অলিগলি ও মূল সড়কের পাশে প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলমের পোস্টার-ব্যানার বেশি চোখে পড়েছে।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলম ও নৌকার প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনের কাছে। মনজুর আলম অভিযোগ করেন, মামলার তথ্য গোপন করেছেন নৌকার প্রার্থী। নৌকার প্রার্থী অভিযোগ করেন, মনজুর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে সমর্থনসূচক ভোটার তালিকায় ভুল তথ্য দিয়েছেন। তবে কমিশনে কোনো অভিযোগ টেকেনি। 

আবার এক সপ্তাহ আগে নৌকার প্রার্থী মো. মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলম। অভিযোগে বলা হয়, নৌকার প্রার্থী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে টাকা বিতরণ করেছেন। নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি এই অভিযোগ যাচাই করে কমিশনের সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। মনজুর আলমের অভিযোগের বিষয়ে মো. মহিউদ্দিন বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।