সিটি করপোরেশনের ক্ষমতা পাচ্ছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে অধিকাংশ সিটি করপোরেশনের মেয়র কর্মস্থলে আসছেন না। কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কাউন্সিলরদের খোঁজ মিলছে না। মেয়র ও কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এমন বাস্তবতায় কাজে গতি আনতে যেসব সিটি করপোরেশনে মেয়র অনুপস্থিত, সেখানকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও) আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে।
যেসব জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভায় মেয়র নেই, সেখানেও সিইওকে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দিতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার এ–সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের বড় অংশই আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
অন্যদিকে দেশজুড়ে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের সনদ দেওয়ার কাজ সহজ করতে মাঠ প্রশাসনকে দায়িত্ব দিতে আরেকটি আলাদা আদেশ জারি করতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মনোনীত প্রতিনিধি, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) প্রতিনিধি এবং পৌরসভা পর্যায়ে স্থানীয় সরকারের উপপরিচালকের (ডিডি-এলজি) প্রতিনিধিকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে দীর্ঘমেয়াদে সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভায় ‘প্রশাসক’ বসানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। প্রশাসকদের পদমর্যাদা হবে অতিরিক্ত সচিব। অবশ্য বিদ্যমান স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনে প্রশাসক বসানোর সুযোগ নেই। সবখানে প্রশাসক বসাতে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে একটি অধ্যাদেশ জারি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
কেন অধ্যাদেশ জারি করতে হবে, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যমান স্থানীয় সরকার আইনের ১৩, ২৫ ও ১০৮, এই তিনটি ধারা পর্যালোচনা করেছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। তাতে অবস্থা বিশেষে প্রশাসক নিয়োগ, মেয়রদের অপসারণ, করপোরেশন গঠন ও বাতিলের বিষয় বলা আছে। পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিদ্যমান আইনে প্রশাসক বসানোর সুযোগ নেই। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মেয়ররা অনুপস্থিত থাকলে কী করা হবে, তা আইনে নেই। সে কারণে আলাদা অধ্যাদেশ জারি করতে হবে।
একাধিক সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা বলছেন, যেকোনো ক্রয়, নিয়োগ, পদায়ন, বদলি, বোর্ড সভা ও দরপত্র আহ্বান, মূল্যায়নকাজের অনুমোদন, কাজের বিল, নিরাপত্তা জামানত, আর্থিক ও প্রশাসনিক কাজের অনুমোদনসহ সব বিষয়েই মেয়রদের সই দরকার হয়। এখন তাঁরা না আসায় সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া সারা দেশেই জন্ম ও মৃত্যুসনদের কার্যক্রমও স্থবির হয়ে গেছে। কাজে গতি আনতে কাউকে না কাউকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত।
মেয়র ও কাউন্সিলররা কর্মস্থলে না আসায় সেবাগ্রহীতারা ফিরে যাচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ সব কার্যক্রম আটকে যাওয়ায় বিষয়টির সুরাহা করতে দুই দিন ধরে নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।