বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় রথযাত্রা উৎসব শুরু

বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব। রাজধানীর ইত্তেফাক মোড়ে, ২৭ জুন, ২০২৫ছবি: প্রথম আলো।

বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে রাজধানীতে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব। আজ শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে রাজধানীর স্বামীবাগ আশ্রম থেকে রথযাত্রা শুরু হয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) ঢাকায় এই রথযাত্রার আয়োজন করেছে।

বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব। রাজধানীর ইত্তেফাক মোড়ে, ২৭ জুন, ২০২৫
ছবি: প্রথম আলো।

রথযাত্রা স্বামীবাগ আশ্রম থেকে শুরু হয়ে রাজধানীর জয়কালী মন্দির, ইত্তেফাক মোড়, শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, কদম ফোয়ারা, হাইকোর্ট মাজার, দোয়েল চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জগন্নাথ হল, পলাশী মোড় হয়ে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পৌঁছায়। ৯ দিন পরে ৫ জুলাই বেলা তিনটায় একই পথে উল্টো রথের শোভাযাত্রা ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে স্বামীবাগ আশ্রমে আসবে।

শোভাযাত্রাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইসকন ৯ দিনব্যাপী শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের এ রথযাত্রার আয়োজন করেছে। এ বছর ঢাকাসহ সারা দেশে ইসকনের ১২৮টি মন্দির ও আশ্রমে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে ইসকনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এর আগে আজ সকাল আটটায় বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শুভ রথযাত্রা মহোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। বেলা দেড়টায় আলোচনা সভা শেষে তিনটায় রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করা হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভারতীয় হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি গোকুল ভি কে উপস্থিত ছিলেন। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী।

বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব। রাজধানীর ইত্তেফাক মোড়ে, ২৭ জুন, ২০২৫
ছবি: প্রথম আলো।

রথযাত্রা শেষে ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা সত্যযুগ থেকে হয়ে আসছে। বছরের দুটো দিন জগন্নাথ দেব মন্দির থেকে বেরিয়ে ভক্তদের দর্শন দেন। যেসব ভক্ত মন্দিরে আসেন না, তাঁদের উদ্ধার করতে আসেন। এবারের রথযাত্রায় জগন্নাথের কাছে একটাই প্রার্থনা, যেন এই দেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের মানুষ সুখে–শান্তিতে বসবাস করতে পারে।

রথযাত্রায় জগন্নাথ দেব, শুভদ্রা, বলরাম দেবের তিনটি আলাদা রথ তৈরি করা হয়। রথের প্রথম অংশে বলরাম দেব, দ্বিতীয় অংশে শুভদ্রা দেবী এবং শেষ অংশে জগন্নাথ দেবের ভক্ত, অনুরাগীরা অংশ নেন।

রথযাত্রায় অংশ নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী বিপ্লব কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘জগন্নাথ দেবের কাছে একটাই চাওয়া, তিনি যেন দেশে শান্তি ফিরিয়ে দেন। একে অপরের ধর্মকে সম্মান দিয়ে যেন সবাই শান্তিতে বসবাস করতে পারে।’

রথযাত্রায় প্রতিমা ভাঙার প্রতিবাদ

রথযাত্রায় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ও মন্দির ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতনী শিক্ষার্থীদের একটি দল। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রথযাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সামনে পৌঁছালে এই শিক্ষার্থীরা রথযাত্রায় অংশ নিয়ে প্রতিবাদ জানান। মুখে কালো কাপড় বেঁধে তাঁরা প্রতিবাদ জানান।

এ সময় ‘সব ধর্মের নিরাপত্তা চাই, মন্দির ভাঙা চলবে না ভাই’, ‘যদি মবের কথাই রাষ্ট্র মানে, সংখ্যালঘু যাবে কোনখানে’, ‘এই বাংলার মাটিতে মসজিদ, মন্দির, চার্চ, প্যাগোডা, সকলের স্থান চাই’, ‘হিন্দু প্রতিমা ভাঙা কি ধর্ম অবমাননা নয়?’, ‘সোনার বাংলায় ধর্মীয় সহিংসতার ঠাঁই নাই’, ‘প্রতিমা ভাঙে বুলডোজারে, ইন্টেরিম কী করে!’ লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন তাঁরা।

শিক্ষার্থীদের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাখাল চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দেখছি লালমনিরহাটে একজন হিন্দু নাপিত ও তাঁর ছেলের ওপর মব সৃষ্টি করে নির্যাতন করা হয়েছে। ঢাকার খিলক্ষেতে বুলডোজার দিয়ে মন্দিরের প্রতিমা ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমরা এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মব নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে উসকে দিচ্ছে। ৫ আগস্টের পরে আমরা সুদিন আশা করেছিলাম, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাইনি।’

রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে ৯ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামানায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, পদাবলি কীর্তন, আরতি কীর্তন, ভাগবত কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পাঠ, ধর্মীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও ধর্মীয় নাটক মঞ্চায়ন।

রথযাত্রা উপলক্ষে ঢাকা শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রাজধানীর ইত্তেফাক মোড়ে, ২৭ জুন, ২০২৫
ছবি: প্রথম আলো।

রথযাত্রা উপলক্ষে ঢাকা শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে রথযাত্রায় টহল দল, সিসিটিভি ক্যামেরা, ফুট প্যাট্রল, রুফটপ পার্টি, হোন্ডা মোবাইল টিম, গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), সাদাপোশাকে গোয়েন্দা, সোয়াট, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ও ট্রাফিক পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া শোভাযাত্রাসহ উৎসব উপলক্ষে নিরাপত্তায় ইসকনের পাঁচ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকেন।