ডেঙ্গু প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগে নজর দেওয়ার পরামর্শ ভাইরোলজিস্টদের

রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আজ বুধবার ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা
ছবি: প্রথম আলো

দেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে মশকনিধনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে এতে দীর্ঘ মেয়াদে মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমতে পারে; যা ভবিষ্যতে মানুষকে আরও সংক্রমণপ্রবণ করে তুলতে পারে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেছেন ভাইরোলজিস্টরা।

আজ বুধবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা উঠে আসে। এ সভার আয়োজন করে সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস, বাংলাদেশ।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টসের প্রকাশনা সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক সাইফ উল্লাহ মুন্সী। ডেঙ্গু প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্বে ডেনভ্যাক্সিয়া এবং কিউ–ডেঙ্গা নামের দুটি টিকা ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে ডেনভ্যাক্সিয়া বিশ্বের ২০টি দেশে ও কিউ–ডেঙ্গা লাতিন আমেরিকা এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের চারটি দেশে ব্যবহৃত হয়েছে।

এসব টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান অধ্যাপক সাইফ উল্লাহ মুন্সী। টিকাগুলোর কার্যকারিতা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ডেঙ্গুর টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো অনুমোদন দেয়নি, এ প্রসঙ্গে সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ‘মানুষ মারা যাওয়ার দায়িত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নেবে না। নিজেদের চিন্তা নিজেদের করতে হবে।’

ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপের বিরুদ্ধেই কাজ করে—এমন টিকা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে সভায় বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম টেট্রাভ্যালেন্ট নামের একটি টিকার কথা উল্লেখ করেন। এ ছাড়া তিনি টিকার ট্রায়ালের ওপর জোর দেন।

সিটি করপোরেশন থেকে মশা নিধনের জন্য যে স্প্রে দেওয়া হয়, তার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, মশা নিধনের জন্য কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ করলে মশা মারা পড়ত। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আরও বলেন, হাফহাতা শার্ট পরে মেয়র যান মশার লার্ভা খুঁজতে। এখানে কে, কীভাবে, কী করছে তার কোনো হিসাব নেই।

গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। তাঁর এ বক্তব্যের সমালোচনা করে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বটা কী? ডেঙ্গু তো স্বাস্থ্যের ব্যাপার। সব ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ে আর সব দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে টিকা দেওয়ার বিষয়ে এখনো আলোচনা হয়নি বলে জানান সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক তাহমিনা শিরিন। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

হাসপাতাল থেকে তথ্য পাওয়া এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রতিদিন দেওয়া তথ্যে ডেঙ্গুর সঠিক চিত্র উঠে আসে কি না এবং রোগীদের নিয়ে গবেষণাসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তাহমিনা শিরিন বলেন, দেশে একজন রোগীকে ট্র্যাক করার মতো কোনো পদ্ধতি এখনো গড়ে ওঠেনি। একজন রোগী নানা সময়ে নানা জায়গায় চিকিৎসা নেন। কিন্তু তাঁর কোনো ইতিহাস কোথাও থাকে না।

বিএসএমএমইউর ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. আফজালুন নেছা বলেন, শুধু সিটি করপোরেশনের ওপর দায়িত্ব দিলেই হবে না। এটা সমন্বিত প্রক্রিয়া। চিকিৎসকদেরও সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ব্যর্থতার দায় কারও ওপরই দেওয়া যায় না। সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। নানা ধরনের টিকা আছে। টিকার কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা করতে হবে।  

সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টসের সভাপতি কাজী জুলফিকার মামুনের সভাপতিত্বে সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তারেক মাহবুব খানসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।