যুক্তরাষ্ট্র–বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সংলাপ বুধবার, হবে চুক্তি নিয়ে আলোচনা

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নানা স্তরের আলোচনার অংশ হিসেবে আগামী বুধবার ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৈঠকে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশ কীভাবে অবদান রাখবে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি প্রতিরক্ষা চুক্তি জিসোমিয়া ও আকসা নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

গতকাল সোমবার কূটনৈতিক সূত্রগুলো দুই দেশের প্রতিরক্ষা সংলাপ অনুষ্ঠানের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, দুই দেশের ১০ম প্রতিরক্ষা সংলাপে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) অপারেশন ও পরিকল্পনা অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুসাইন মুহাম্মাদ মাসীহুর রহমান এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেবেন সে দেশের ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ডের কৌশলগত পরিকল্পনা ও নীতিবিষয়ক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল টমাস জে জেমস।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সংলাপে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস), প্রতিরক্ষা চুক্তির অংশ হিসেবে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) ও দ্য অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট (আকসা), আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যকার সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, দুর্যোগ মোকাবিলা, শান্তিরক্ষা ও প্রতিষ্ঠা, প্রশিক্ষণ, দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের সফর বিনিময়, জঙ্গিবাদ দমনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

চীনের প্রভাব কমানোর লক্ষ্যে অবাধ, মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অগ্রাধিকার। তারা যেকোনো মূল্যে এ অঞ্চলে নিজ উপস্থিতি ও প্রভাব নিশ্চিত করতে চায়। আর এ উপস্থিতি নিশ্চিতে আইপিএসে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার তাদের অন্যতম অগ্রাধিকার।

কূটনৈতিক একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি অবাধ, মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কীভাবে বাংলাদেশ অবদান রাখতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানও বৈঠকে আলোচনায় থাকবে। আইপিএস নিয়ে আলোচনায় ওয়াশিংটন থেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়টিতে জোর দেওয়া হবে। কারণ, এটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অগ্রাধিকার।

২০১২ সালে শুরু হয়ে এর আগে গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝিতে যুক্তরাষ্ট্রে ঢাকা–ওয়াশিংটন দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সংলাপের নবম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহের বিষয়ে আলোচনা হবে। ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নে সামরিক বাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে চাইছে বাংলাদেশ। সমরাস্ত্র সংগ্রহে একক দেশ নির্ভরতা কাটাতে কাজ করছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে অন্যান্য উৎসের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকেও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র কিনতে চায় বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ক্রয়ের প্রস্তাবটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া হয়। প্রতিরক্ষা চুক্তি ছাড়া অ্যাডভান্সড মিলিটারি হার্ডওয়্যার বিক্রি করে না যুক্তরাষ্ট্র। ফলে অ্যাডভান্সড মিলিটারি হার্ডওয়্যার নিতে চাইলে জিএসওএমআইএ চুক্তির কথা ঢাকাকে জানায় ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করার বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত বাংলাদেশ। বর্তমানে প্রস্তাবিত চুক্তির খসড়া নিয়ে কাজ করছে দুই দেশ।

সমরাস্ত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তিনটি বিষয় মাথায় রেখে কাজ করছে। প্রথমটি হলো দাম। যে সক্ষমতা রয়েছে, তার মধ্যে থেকেই অস্ত্র সংগ্রহ করবে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় হলো অস্ত্রের গুণগত মান। এ জায়গায় জোর দেবে বাংলাদেশ। সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের অস্ত্র সংগ্রহে ভূমিকা পালন করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর সবশেষ হলো কৌশলগত দিক বিবেচনা। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কৌশলগত দিক বিবেচনায় সমরাস্ত্র সংগ্রহ করবে বাংলাদেশ।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুটি প্রতিরক্ষা চুক্তির মধ্যে জিসোমিয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এখন চুক্তিটি নিয়ে ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করছে ঢাকা। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।