লুটপাটকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কর্মহীন-বেকারদের দিতে হবে

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সোমবার মহান মে দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা
ছবি: প্রথম আলো

যাঁরা ব্যাংকের টাকা নিয়ে ঋণখেলাপি হয়েছেন এবং লুটপাট করে বিপুল টাকার মালিক হয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে সেই অর্থ রাষ্ট্রকে ফিরিয়ে নিতে হবে। সেই টাকা থেকে কর্মহীন-বেকার মানুষদের ভাতা দিতে হবে। এ ছাড়া আমলাদের অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধাগুলো কমিয়ে আলাদা তহবিল করা দরকার। যাঁরা কর্মহীন, তাঁদের ওই টাকা থেকে মাসিক বেকার ভাতা দিতে হবে।

সোমবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহান মে দিবসের আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে। আয়োজনে আলোচনা পর্ব ছাড়াও ছিল সাংস্কৃতিক নানা পরিবেশনা।

আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন নাট্যকার, নাট্যনির্দেশক ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘এ কথা সত্যি যে আমরা যাঁরা নাটক করি, নাটকই আমাদের রাজনীতির দিকে ঠেলে দেয়। সেই রাজনীতি মানুষের মুক্তি ও তার প্রাণের কথাটাকে প্রকাশ করার জন্য আমাদের নিয়োজিত করে। রাজনীতি বলতে আমরা শাসক ও শোষিতের মধ্যে দ্বন্দ্বের রাজনীতি বুঝি। মানুষের শ্রম, বিনোদন ও স্বপ্নকে লালন করাই আমাদের কাজ। সেই কাজে ব্রতী হয়ে বহু বছর ধরেই আমরা এটা ধরে রেখেছি। কিন্তু অনেক সময় দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করি যে আমাদের নাট্যকর্মীরাও ভীষণভাবে শোষিত। সার্বক্ষণিক একটি কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও আমাদের জীবিকা হচ্ছে না। ৫০ বছর ধরে আমরা যাঁরা এ দেশে নাট্যকর্মের সঙ্গে যুক্ত আছি, তাঁরা এই জীবিকার অন্বেষণ করে চলেছি। কিন্তু জীবিকা হচ্ছে না। এটাও আমাদের একটা বড় সংগ্রাম।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘শ্রমিকশ্রেণি, সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষের জীবনধারণ ও মৌল-মানবিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য মজুরি যে হারে হওয়া উচিত, সেই হারে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে—এটি আমাদের দাবি। সব নাগরিককে কাজ দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কাজ দিতে না পারলে তাঁদের অন্তত একটি ভাতা দেওয়া উচিত। সেটা বেকার ভাতা নামে হোক বা অন্য যেকোনো নামে। এর তহবিল কোত্থেকে আসবে? এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য হলো, হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি আছে, যাঁরা রাষ্ট্রের টাকা আত্মসাৎ করে নিয়েছেন, সেই টাকা উদ্ধার করতে হবে।’

গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘সব মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু এখন স্বাধীনতার সব সুফল এবং দেশের সব সম্পদ ভোগ করছে মুষ্টিমেয় মানুষ। লুট করে নেওয়া অযাচিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত সম্পদ, রাষ্ট্র কর্তৃক সেটাকে অধিগ্রহণ করতে হবে।’

আমলাদের বেতনের বাইরে নানা সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘যে দেশে একজন সাধারণ শ্রমিককে ১৫ হাজার টাকা বেতন দিতে পারে না, যে দেশে কোটি মানুষ বেকার আছে, সেই দেশের একজন আমলা এত সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন কি না, এটি সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আমাদের বক্তব্য হলো, সেই অর্থ কমিয়ে দিয়ে আলাদা তহবিল করা হোক। যাঁরা কর্মহীন, তাঁদের ওই টাকা থেকে মাসিক বেকার ভাতা দিতে হবে।’

আলোচনা সভায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি ঝুনা চৌধুরী বলেন, ‘নাগরিক হিসেবে আমাদের যে কাজটি জরুরিভাবে করা উচিত, সেটি হলো শিশুশ্রম বন্ধ করা। যেখানেই শিশুশ্রম, সেখানেই সেটাকে আমরা প্রতিহত করার চেষ্টা করব।’

পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ গিয়াস, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল চন্দন রেজা, নাট্যজন আজাদ আবুল কালাম প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা অনুষ্ঠানের শুরুতে ও শেষে নাটক ও সংগীত পরিবেশন করেন।