বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা জেঁকে বসছে: অধ্যাপক লেরি জে ডায়মন্ড

সেমিনারে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক বক্তব্য দেন
ছবি: প্রথম আলো

বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা আরও জেঁকে বসছে। স্বৈরাচারী সরকারগুলো বিরোধী দলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। আদালতের স্বাধীনতা অবমূল্যায়ন করছে। সম্প্রচারব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। এসব কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক কাঠামো ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। বিশ্বখ্যাত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক লেরি জে ডায়মন্ড এক সেমিনারে এসব কথা বলেন।

রোববার চট্টগ্রামের র‌্যাডিসন ব্লু বে ভিউতে ‘বিশ্ববিদ্যালয় কি সমাজ গঠন করতে পারে’ শিরোনামের আন্তর্জাতিক সেমিনারে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে লেরি জে ডায়মন্ড বক্তব্য দেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) সেমিনারের আয়োজন করে।

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক লেরি জে ডায়মন্ড বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধু পাঠদান নয়। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কোনো একটা কাজে দক্ষ করে তোলাও বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র কাজ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করবেন, বিতর্ক করবেন, রাজনৈতিকভাবে সচেতন হবেন। ভিন্ন সংস্কৃতির বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা রাখবেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গ্রহণ ও বর্জন করা শিখবেন, এটিই প্রত্যাশা।

বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ববাদের উত্থান, নাগরিক অধিকার ও সংঘাতের পরিণতি নিয়ে কথা বলেন অধ্যাপক লেরি জে ডায়মন্ড। তিনি কর্তৃত্ববাদের উত্থানের পেছনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কারণ, কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠার ১২টি ধাপ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো সংকুচিত হওয়ার প্রক্রিয়া তুলে ধরেন।

অধ্যাপক লেরি জে ডায়মন্ডের মতে, উত্তম গণতন্ত্রের জন্য সুশাসন, সংখ্যালঘুর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সংখ্যাগুরুর মতের ভিত্তিতে শাসনব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় জবাবদিহি থাকে। কিন্তু কর্তৃত্ববাদ এসবের বিপক্ষে কাজ করে।

ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক লেরি জে ডায়মন্ড
ছবি: সংগৃহীত

এক প্রশ্নের জবাবে লেরি জে ডায়মন্ড বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধু পাঠদান নয়। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কোনো একটা কাজে দক্ষ করে তোলাও বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র কাজ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করবেন, বিতর্ক করবেন, রাজনৈতিকভাবে সচেতন হবেন। ভিন্ন সংস্কৃতির বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা রাখবেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গ্রহণ ও বর্জন করা শিখবে, এটিই প্রত্যাশা।

রোববার সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সেশনে এ সেমিনার হয়। এতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গবেষক, বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার, এইউডব্লিউর শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সেমিনারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন, বৈশ্বিক কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার উত্থান ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোর পটপরিবর্তন, রাষ্ট্রহীন নাগরিকদের জীবনব্যবস্থা, মানবাধিকারসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।

‘স্বপ্নের পথে হাঁটো, মনের কথা শোনো’

এর আগে সকাল ১০টায় ‘নারী নেতৃত্বের বাধা ডিঙাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা’ শিরোনামের একটি সেশনে আলোচক হিসেবে অংশ নেন বৈশ্বিক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস জাপানের সাবেক সহসভাপতি কেথি মাতসুই, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় আবুধাবি শাখার উপাচার্য মেরিয়েট ওয়েস্টারমান। এ সেশন পরিচালনা করেন এইউডব্লিউর উপাচার্য রুবানা হক। এ পর্বে আলোচকেরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘নারীরা বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে বাধা এখনো আছে। তাই কারও কথা শোনার দরকার নেই। তুমি তোমার স্বপ্নের পথে হাঁটো, মনের কথা শোনো।’

সেমিনারের একটি পর্বে এইউডব্লিউ শিক্ষার্থীরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন
ছবি: প্রথম আলো

সেমিনারের এ পর্বে এইউডব্লিউর উপাচার্য রুবানা হক শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান, এইউডব্লিউ কীভাবে তাঁদের স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করছে। জবাবে শিক্ষার্থীরা বলেন, এই ইউনিভার্সিটির পরিবেশটা একেবারে অন্যরকম। এখানে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন। বিভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষার সঙ্গে তাঁরা পরিচিত হচ্ছেন। ক্যাম্পাসে নানা ধরনের ক্লাব রয়েছে। এসব ক্লাবের মাধ্যমে তাঁরা নিত্যনতুন বিষয় শিখছেন। নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে, যা তাঁদের ভবিষ্যৎ জীবনে কাজে লাগবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মনের ভেতরের স্পৃহা জাগিয়ে তুলতে কাজ করে এইউডব্লিউ।

সাহস হারাননি তাঁরা

বেলা দুইটায় ‘নিপীড়ন এবং রাষ্টহীনতার সন্ত্রাস: স্থানচ্যুতি এবং নির্বাসনের মানবিক মাত্রা’ শিরোনামের আরেকটি সেশনে অংশ নেন রোহিঙ্গা সেন্টার অব কানাডার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল্লাহ মুহাম্মদ, এইউডব্লিউর শিক্ষার্থী হালা আলশার, নুসাইবা গালিব আলনাহারি, মাহাদিয়া আহমাদি, তোফ্রিদা রাহমান, ফালাক শাবির। এই শিক্ষার্থীরা কাশ্মীর, ইয়েমেন, সিরিয়া, রোহিঙ্গা ও আফগানিস্তানের নাগরিক। পর্বটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস।

শিক্ষার্থীরা কীভাবে বাধা অতিক্রম করে এ পর্যন্ত এসেছেন, তা তুলে ধরা হয় এ পর্বে। শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁদের রাষ্ট্রে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা খুবই সাধারণ বিষয়। অনেক নারী বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান না। আফগানিস্তানে আজ বোমা বিস্ফোরণ হলে কাল সব ভুলে কাজ শুরু করতে হয়। কিন্তু এসব বাধা অতিক্রম করে তাঁরা এত দূর এসেছেন। কোনোভাবেই সাহস হারাননি।